Pages

Tuesday, May 17, 2011

কলকাতার দিদি

গান গাইতে ও ছবি আঁকতে প্রচণ্ড নেশা। কিন্তু পেশা রাজনীতি। আর জীবনটা অতি সাদাসিধে। যে বাড়িতে তিনি থাকেন, এর পাশেই নালা। সুতির শাড়ি আর সাধারণ চপ্পলেই দিব্যি চলেন তিনি। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জি। 

মমতা ব্যানার্জি ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার কালিঘাটের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রোমিলা এবং গায়ত্রী ব্যানার্জীর মেয়ে মমতা ব্যানার্জী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। 
মমতা তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস এর মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালে মমতা রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথম যাদবপুর আসন থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি সিপিএম এর শীর্ষ নেতা সোমনাথ চ্যাটার্জিকে পরাজিত করেন। পরে তিনি অল ইন্ডিয়া যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে গেলেও পরে তিনি দক্ষিণ কলকতা আসন থেকে ১৯৯১ সালে কংগ্রেস সরকার গঠন করলে মন্ত্রী হন মমতা। ১৯৯৬ সালে মমতা অভিযোগ করেন, কংগ্রেস দেশজুড়ে দুর্নীতি শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকারকে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছে। 

১৯৯৭ সালে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) গঠিত সরকারে যোগ দেন। তাঁকে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

২০০১ সালের শুরুতে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মমতা। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পোন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সরকার হাওড়ায় কৃষিজমি দিতে রাজি হয়। এর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে জনতা। মমতা সেই আন্দোলনে জনতার পক্ষে অবস্থান নিলে বুদ্ধদেব সরকার শিল্পোন্নয়নের নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এরপর ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেন মমতা। এ ছাড়া নন্দীগ্রামে রাজ্য সরকারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাও বন্ধ করতে সক্ষম হন। ওই আন্দোলনে সরকারের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসী নিহত হয়। এসব আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মমতা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন মমতা। 

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করেন মমতা। নির্বাচনে তাঁর দল ১৯টি আসন লাভ করে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের সমস্যা, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর ও রেজওয়ান হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব ছিলেন মমতা। 

২০১০ সালে কলকাতা ও বিধাননগর মিউনিসিপালে জয়লাভ করে তাঁর দল। সেই মমতাই এখন হতে যাচ্ছেন পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী। কলকাতার সমর্থকদের কাছে মমতা দিদি বলে পরিচিত। 

আর গত শুক্রবার ( ১৩.০৫.২০১১) এই দিদির (মমতা ব্যানার্জী) কাছেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দীর্ঘ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টের। রাজ্যের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ লাল রঙের পরিবর্তে সবুজের পক্ষে রায় দিয়েছে। ২৮৫ আসনের মধ্যে মাত্র ৬৩টিতে জিতেছেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। বিপরীতে মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২২৬ আসন। সরকার গঠন করতে প্রয়োজন মাত্র ১৪৮ আসন। সেখানে তৃণমূল এককভাবেই জিতেছে ১৮৫ আসনে। এর বাইরে বিজেপিসহ অন্য দলগুলো পেয়েছে পাঁচটি আসন। 

এর মাধ্যমে ১৯৭৭ সালের ২১ জুন থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলা বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হলো। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুক্রবার দুপুরেই রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। রাজ্যের পরবর্তী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এর মাধ্যমেই ভারতের উত্তর প্রদেশ, তামিলনাডু ও দিল্লির পর এবার পশ্চিমবঙ্গ পেতে যাচ্ছে একজন নারী মুখ্যমন্ত্রী (মমতা ব্যানার্জী)। 

মমতার এ অবিস্মরণীয় সাফল্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান। এছাড়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ফোন করে মমতাকে শুভেচ্ছা জানান। 

অভিনন্দন দিদি তোমায়। 

এর আগে এখানে প্রকাশিত 
http://www.sonarbangladesh.com/articles/SaifBarkatullah 

No comments:

Post a Comment