Pages

Saturday, December 11, 2010

উইকিলিকস : তথ্যযুদ্ধ এবং বিশ্ব রাজনীতির নতুন ঢেউ



এক.
একের পর এক তথ্য ফাঁস করে সারা দুনিয়ায় ঝড় তুলেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও ওই সব বার্তায় আছে বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতার স্বভাবচরিত্র ও ব্যক্তিগত দোষগুণ। জুলাই মাসে আফগানিস্তান সংঘাতের ওপর ৭৭ হাজার গোপন মার্কিন ফাইল এবং অক্টোবর মাসে ইরাক যুদ্ধবিষয়ক চার লাখ দলিলপত্র ফাঁস করে যুক্তরাষ্ট্রকে হতভম্ভ করেছেন। গত জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ম্যানিংয়ের সিক্রেট ইন্টারনেট প্রটোকল রাউটার নেটওয়ার্কে (সিপরনেট) ঢোকার সুযোগ ছিল। এ নেটওয়ার্ক থেকে সরকারি ও কূটনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা যায়। মার্কিন কর্তৃপক্ষ উইকিলিকসের দলিল ফাঁসের ক্ষেত্রে আগেও যেমন বলেছে এর ফলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে (আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের নথি), এবারও তেমনি বলছেন মার্কিন কূটনীতিকেরা বিপদে পড়তে পারেন। উইকিলিকসের সর্বশেষ তথ্য ফাঁস আসলেই কতটা ভয়ঙ্কর তা ইতোমধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারীর বিবৃতিতে বুঝা গেছে।

দুই.
বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড়:
২৫১,২৮৭টি বার্তার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র কয়েক'শ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, ব্রিটেনের গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের লো মঁদ, জার্মানির ডের স্পিগেল ও স্পেনের এল পেইস্ত অন্তত এ পাঁচ বিখ্যাত পত্রিকাকে উইকিলিকস সবগুলো বার্তার কপি সরবরাহ করেছে সুবিধামতো ছাপার জন্য। ব্রিটেনের দি টাইমস পত্রিকার উপসম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ধরে নেওয়া যায় গুরুতর কোনো বিশ্বাসঘাতকতা বা কেলেঙ্কারি নয়, স্রেফ বিব্রতকর কিছু সত্যি বেরিয়ে আসতে পারে এ দফার লিক থেকে। তবে কূটনীতিকেরা এখন থেকে আর সাংকেতিক তারবার্তার মাধ্যমে সরল ও খোলামেলা অভিমত পাঠাতে না পারলে কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি রক্ষা আরও কঠিন হবে। ফরেন পলিসিতে লেখা হয়েছে, মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নির্ভয়ে ওয়াশিংটনে সাদাসিধে ভাষায় এ ধরনের বার্তা পাঠাতে পারা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রথম পাতাজুড়ে তাঁদের গোপন বার্তা এমনটা অনাকাঙ্খিত। তা হলে কেউ ঝুঁকি নিয়ে আর খবর পাঠাবেন না। এটা খুব উদ্বেগজনক। দি টেলিগ্রাফ-এর বেনেডিক্ট ব্রোগান বেশ রগড় করেছেন বিষয়টা নিয়ে। তাঁর ভাষায়, এটা এক হিসেবে মজার ব্যাপার। ব্রোগানের যুক্তি, এতে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ধরুন ফাঁস হওয়া গোপন বার্তায় দেখা গেছে, ইয়েমেনে গোপনে আল-কায়েদা সদস্যদের সাবাড় করছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিন.
কে এই অ্যাসেঞ্জ:

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বয়স ৩৯ বৎসর। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। গোপন নথি প্রকাশ করতে সবাইকে সহায়তা করার জন্য ২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাসাঞ্জ। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দেখতে ছিপছিপে, দীর্ঘদেহী, শুভ্রকেশধারী । মানুষটির গলার স্বর খুবই মৃদু। এতটাই মৃদু যে মাঝেমধ্যে তাঁর কথা শোনাই মুশকিল। নিজেকে একাধারে সাংবাদিক, প্রকাশক ও উদ্ভাবক মনে করেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, আমি এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি যা গণমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ সমস্যার সমাধান করবে।

চার.
কতজন কাজ করে উইকিলিকসে?
উইকিলিকসে কাজ করেন ৬জন পূর্ণকালীন স্বেচ্ছাসেবী। ওয়েবসাইটটির রয়েছে প্রায় এক হাজার এনক্রিপশন বিশেষজ্ঞ।
উইকিলিকসের মুখপাত্র শুধু তিনি নিজে। ওয়েবসাইটটিতে যেসব নথিপত্র প্রকাশ করা হয়, তা সব সময় হুবহু প্রকাশ করা হয় না। পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন অ্যাসাঞ্জ। তরুণ বয়সে তিনি ছিলেন হ্যাকার।

পাঁচ.
তথ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে:
উইকিলিকস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়টা এতা বেশী যে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে ইন্টারনেটের জগৎ থেকে উইকিলিকসকে উধাও করে দিতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গত ২ ডিসেম্বর উইকিলিকসের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ছয় ঘণ্টার মধ্যে সুইজারল্যান্ড থেকে আবার চালু হয় উইকিলিকস। গত ৪ ডিসেম্বর উইকিলিকস ঘোষণা দিয়েছে, জার্মানি, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে তাঁদের ওয়েবসাইটের পৃথক তিনটি ডোমেইন নিবন্ধন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক টুইটারের বার্তায় উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ লিখেছে, প্রথমবারের মতো বড় ধরনের তথ্যযুদ্ধ (ইনফো ওয়ার) শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধক্ষেত্র উইকিলিকস, আর আপনারা সৈন্যসামন্ত। একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইকিলিকস তাদের ওয়েবসাইটের সার্ভার ফ্রান্সে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এ কথা জানতে পেরেই ফরাসী মিত্রদের দ্বারস্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্রান্সের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফরাসী সরকারও এখন উইকিলিকসের ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ফরাসী বাণিজ্যমন্ত্রী এরিক বেসন উইকিলিকসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশের ব্যবসায়ী এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ফ্রান্সে উইকিলিকসের সার্ভার শিগগির বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ছয়.
অ্যাসাঞ্জকে হত্যার হুমকি:
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি দাবি করেন, নথি ফাঁস করে তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি বলেন, আমার বা উইকিলিকসের কিছু হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও এক লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাবে। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সুইডিশ পুলিশ।


সাত.
যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারণা:
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে তারা এমন ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করছে যে উইকিলিকস যা করছে, তা বেআইনি। যারা উইকিলিকসে সহযোগিতা করবে, ভবিষ্যতে তারা সরকারী চাকরির অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।

আট.
হোয়াইট হাউসের নির্দেশ:
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে যথাযথ অনুমোদন ছাড়া উইকিলিকসে ফাঁস করা গোপন নথি পড়তে না পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গোপন তথ্য গোপন রাখাই প্রত্যেক কর্মকর্তার দায়িত্ব। গোপন তথ্য প্রকাশ হওয়া মানে এই নয় যে সেগুলো গোপন রাখার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।

নয়.
এগিয়ে এসেছেন হ্যাকাররা:
একসময়কার হ্যাকার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সহযোগিতা করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ইউরোপের হ্যাকাররা। তাঁরা বলেছেন, উইকিলিকসের মতো ওয়েবসাইট চালু রেখে তথ্য অধিকার বহাল রাখতে চান তাঁরা। তাই উইকিলিকসের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২১টি ডোমেইন জোগাড় করেছেন তাঁরা।

দশ.
উইকিলিকসের তথ্যমতে রাশিয়া হচ্ছে মাফিয়া রাষ্ট্র :
রাশিয়া, বেলারুশ ও চেচনিয়াকে মাফিয়া রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন একজন জ্যেষ্ঠ স্প্যানিশ কৌঁসুলী। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ওই কৌঁসুলী এ মন্তব্য করেন। উইকিলিকসের সদ্য প্রকাশিত মার্কিন গোপন কূটনৈতিক দলিলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। উইকিলিকসে প্রকাশিত ওই তথ্যে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ­্লাদিমির পুতিনও এই মাফিয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।

এগার.
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ :
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। একই সঙ্গে তার নাম ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ানটেড তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রেড নোটিশে অ্যাসাঞ্জের অবস্থান সম্পর্কে কেউ কিছু জানলে তা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। অবশ্য ইন্টারপোল জানায়, ৩৯ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এই পরোয়ানা জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সদস্যভুক্ত সব দেশকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যে কোনো দেশে অ্যাসাঞ্জকে দেখা গেলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। এর আগে অ্যাসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোপন নথি প্রকাশ করায় তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

বার.
উইকিলিকসের নতুন ওয়েবসাইট চালু :
গোপন তথ্য ফাঁসের জন্য বহুল আলোচিত উইকিলিকসের ওয়েবসাইট wikileaks.org বন্ধ করে দিয়েছে ডোমেইন নেইম প্রোভাইডার ইভরিডিএনএস.নেট। তবে ছয় ঘণ্টা পর নতুন ঠিকানায় (wikileaks.ch) সাইটটি আবারও চালু করেছে বলে জানিয়েছে উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। প্রোভাইডার কোম্পানিটি জানায়, বিপুলভাবে সাইবার হামলার শিকার হওয়ায় গত ৩ ডিসেম্বর ওই ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তারা জানায়, সাইবার হামলার কারণে তাদের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তের.
উইকিলিকসে বাংলাদেশ বিষয়ে ২১৮২ নথি
ওয়েবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ গোটা বিশ্বের যে আড়াই লাখ নথি ফাঁস করার মিশনে নেমেছে, তার মধ্যে দুই হাজার ১৮২টি বাংলাদেশ বিষয়ক। গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত উইকিলিকস তার ওয়েবসাইটে ৬৮৩টি নথি প্রকাশ করেছে। বাকিগুলো গুরুত্ব বুঝে পর্যায়ক্রমে আগামী কয়েক মাসে প্রকাশ করা হবে বলে উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ১৯৬৬ সাল থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেশটির ২৭৪টি দূতাবাসের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া নথি ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে ৩৭ নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। উইকিলিকস সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য নথির মধ্যে আট হাজার ৩২০টি চীনবিষয়ক, সাত হাজার ৯৫টি আফগানিস্তান বিষয়ক, পাঁচ হাজার ৮৭টি ভারত বিষয়ক এবং চার হাজার ৭৭৫টি পাকিস্তান বিষয়ক। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত নথির চারটিতে বাংলাদেশের নাম এসেছে। এগুলোর মধ্যে দুটি প্যারিসের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে এবং বাকি দুটি ইসলামাবাদের দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো। এ পর্যন্ত ফাঁস হওয়া এমন সাতটি নথি রয়েছে যেগুলোর অনুলিপি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে এসেছে।

চৌদ্দ.
অবশেষে গ্রেফতার উইকিলিকিস সম্পাদক
অবশেষে গ্রেফতার হলেন জুলিয়ার অ্যাসাঞ্জ। মঙ্গলবার গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ৯টায় গ্রেফতার হন বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলা ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদককে গ্রেফতার করে ব্রিটেনের পুলিশ। সুইডেনে যৌন নিপীড়নের দায়ে দায়ের করা এক মামলায় লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার আগে নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে ব্রিটিশ পুলিশের প্রশ্নের জবাব দিতে আদালতে হাজির হবার কথা জানিয়েছিলেন অ্যসেঞ্জের আইনজীবী মার্ক স্টেফেন।

পনের.
বিশ্ব রাজনীতির নতুন ঢেউ

আসাঞ্জের প্রকাশ করা এসব দলিল বিশ্ব রাজনীতির নতুন আবহ তৈরি হয়েছে। এদিকে বিখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী, ভাষাতাত্ত্বিক নোয়াম চমস্কি উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়ান গিলার্ডের কাছে পাঠানো একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। চিঠিতে গিলার্ডকে তিনি এ বিষয়ে সবল বিবৃতি দেওয়ার জন্যও বলেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন আইনজীবী, লেখক ও সাংবাদিকরা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। অপরদিকে রুশ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের মনে করে অ্যাসাঞ্জকে নোবেল দেওয়া উচিৎ। ৮ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে একথা জানিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভবন ক্রেমলিনের একটি সূত্র। সূত্র জানায়, ক্রেমলিনের মতে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত কীভাবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সাহায্য করা যায় তার উপায় নিয়ে ভাবা। সম্ভবত এ উপায়গুলোর একটি হতে পারে ‘তাকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা। অন্যদিকে আড়াই লাখ মার্কিন কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায়, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে নয় যুক্তরাষ্ট্রকেই দোষারোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া। গোপন তথ্য ফাঁসের এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য নিরাপত্তার পর্যাপ্ততা নিয়ে ৮ডিসেম্বর প্রশ্ন তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেভিন রুড। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুড বলেন, মার্কিন কূটনৈতিক যোগাযোগ সম্পর্কিত আড়াই লাখ গোপন তথ্য প্রকাশের জন্য জনাব অ্যাস্যাঞ্জ নিজে দায়ী নন। তিনি আরো বলেন,এর জন্য আমেরিকানরাই দায়ী। এছাড়াও এসব গোপন তথ্য প্রকাশের পর রাশিয়া, ফ্রান্স, ইরান, সৌদি আরব, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া নতুন করে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।

Saturday, October 9, 2010

আল-জাজিরা এবং বাংলাদেশ



দোহাভিত্তিক আরবি নিউজ চ্যানেল আল-জাজিরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও পশ্চিমা বানোয়াট ঘটনা প্রবাহের সত্য উদ্ঘাটনে অত্যন্ত সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের অগণিত দর্শকের এই পিপাসা উপলব্ধি করেই ২০০৬ সালের ১৫ নভেম্বর আল-জাজিরা ইংলিশ চ্যানেলটি যাত্রা শুরু করে।


বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই টিভি চ্যানেল যেসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এর স্টুডিওগুলো তৈরি করেছে, আজ পর্যন্ত সেগুলো বিশ্বের ১ নম্বর স্থানেই রয়েছে। এর সবচেয়ে চমৎকারিত্ব হচ্ছে যে, আল-জাজিরার চারটি স্টুডিও বিশ্বের চারটি স্থানে থাকায় বিশ্বের কোথাও এর সূর্য অস্তমিত যায় না এবং চারটি স্টুডিও থেকে একসঙ্গে সারা বিশ্বের খবর প্রচারিত হয়।


স্টুডিওগুলো ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন, দোহা ও কুয়ালালামপুরে অবস্থিত, যেগুলো ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে সংযুক্ত। এর বিশেষত্ব হলো, একটি খবর একই সঙ্গে চার দেশের চারজন প্রেজেন্টারকে দিয়ে সঞ্চালন করা হয়, যা সত্যিই মিডিয়া জগতে এক বিস্ময়কর সংস্করণ।



ছবি : দোহা স্টুডিও

বিশ্বব্যাপী আল-জাজিরার ৩০টি দেশের ৪৫ জাতিসত্তার ৩৫০ জন সাংবাদিকদের নিয়ে একটি অত্যন্ত চৌকস নিউজ টিম অবিরাম বিশ্বের যেকোনো স্থানের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ করেছে। সারা বিশ্বে আল-জাজিরার চারটি প্রচারকেন্দ্রসহ মোট ২৯টি ব্যুরো অফিস রয়েছে, যা থেকে প্রায় পুরো বিশ্বই আল-জাজিরা সংবাদ নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে।


আল-জাজিরার সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নামী সাংবাদিকেরা সাজিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: স্যার ডেভিড ফ্রস্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘ফ্রস্ট ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড’, রিজ খানের দর্শকদের অংশগ্রহণভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের প্রশ্নোত্তরবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘রিজ খান’। এ ছাড়া রাগে ওমরের ‘উইট্নেস’ এবং ‘রাগে ওমর রিপোর্ট’ আরও রয়েছে পিপল অ্যান্ড পাওয়ার, লিসেনিং পোস্ট, এভরি ওমেন, ওয়ান ও ওয়ান ইস্ট, ফরটি এইট, ইনসাইড স্টোরি ইত্যাদি।

আল-জাজিরার জগৎখ্যাত নিউজ প্রেজেন্টারদের মধ্যে রয়েছেন স্টিফেন কোল, ফেলিসিটি বার, সোহেল রহমান, ভেরোনিকা পেডরোসা, শিউলি ঘোষ, সামি জিদান, ড্যারেন জরডান, নিক কাক, লরেন টেইলর, তেইমুর নাবিলি, আনান্দ নাইডু, মারিয়াম নামাজি, ইমরান গার্দা, কামাল সান্তা মারিয়া প্রমুখ। এ ছাড়া প্রখ্যাত সংবাদদাতাদের মধ্যে রয়েছেন জেমস বেজ, জেন ডাটন, মোহাম্মদ আদো, নূর ওদে, মারগা অরটিগাস, ঘিদা ফাকরি, হোদা আব্দেল হামিদ, জস্ রাশিং প্রমুখ।
আল-জাজিরা ইংলিশ চ্যানেলটি চালু হওয়ার পর থেকে ১৬০ কোটি মুসলিম-অধ্যুষিত এই বিশ্বের মুসলমানদের সুখ, দুঃখ, তাদের জীবনধারা তুলে ধরার একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে এই চ্যানেলটি কাজ করে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলমানদের লাঞ্ছনা-গঞ্জনার বিভিন্ন সংবাদ এই চ্যানেল প্রচার করে আসছে, আর ফিলিস্তিনিদের কষ্টের জীবনযাত্রা নিয়ে প্রতিদিন এই চ্যানেলে একটা না একটা অনুষ্ঠান থাকছেই। ইসরায়েলিদের নির্মম নিপীড়নের বীভৎস সব চিত্র একমাত্র আল-জাজিরাই প্রচার করে আসছে। চ্যানেলটি একসময় মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে গত বছর থেকে এটি টপ চার্টে রয়েছে। ধীরে ধীরে চ্যানেলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আল-জাজিরা ইংলিশ চ্যানেলের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, সংবাদের ভেতরকার সংবাদ ও নির্ভীক সত্য সাংবাদিকতার কারণে এখন বিশ্বের এক নম্বর জনপ্রিয় চ্যানেল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।



ছবি : রিজ খান


২০০৬ সালের নভেম্বরে আল-জাজিরা ইংলিশ সম্প্রচার শুরুর পরপরই ওমর তাসিক বাংলাদেশে এটি সম্প্রচারের দায়িত্ব পান এবং ২০০৭ সালেই বাংলাদেশে এই চ্যানেল সম্প্রচারের সরকারি অনুমতি দেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে আল-জাজিরায় বাংলাদেশের খবর খুব একটা প্রচারিত হতো না এবং হলেও দু-একজন প্যারাসুট জার্নালিস্ট স্থানীয় কোনো ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে ফুটেজ ধারণ করে তা প্রচার করতেন। সে সময় তানভীর চৌধুরী এই সাংবাদিকদের দেশে আসার ব্যাপারে সহযোগিতা করতেন এবং বিভিন্ন সাাৎকারের ব্যবস্থা করতেন। আল-জাজিরায় দেশের প্রথম বড় ধরনের সংবাদ স্থান পায় ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় তখনো বিদেশি সাংবাদিকেরা স্থানীয় সহযোগিতায় সিডরের নিউজ কভার করেন। এরপর প্রথম বাংলাদেশের ব্যাপক ও বড় আকারের সংবাদ প্রচারিত হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে। এ সময় আল-জাজিরার এক বিশাল নিউজ টিম বাংলাদেশে আসে। বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক জেমস বেজ, সোহেল রহমান, এশিয়া অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রযোজক আলেকজ্যান্ড্রা গিসহ আরও ছয়জন সংবাদ ক্রু ও প্রকৌশলীর সঙ্গে স্থানীয় প্রযোজক হিসেবে ওমর তাসিক ও তানভির চৌধুরী কাজ করেন। পুরো নির্বাচন প্রস্তুতি, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিপ্রেতি নিয়ে টানা ১২ দিন নিয়মিত এই সংবাদ প্রচার হয়। এ জন্য হোটেল শেরাটনে একটি অস্থায়ী স্টুডিও স্থাপন করা হয়। এর পর থেকেই বাংলাদেশের যেকোনো ঘটনাই আল-জাজিরার সংবাদে বেশ ভালোভাবেই স্থান পেতে থাকে এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশে একজন স্থায়ী করেসপনডেন্ট নিয়োজিত হন তিনি হলেন নিকোলাস হক। নিকোলাস হকের সঙ্গে ওমর তাসিক সংবাদ প্রযোজক হিসেবে এবং সুলায়মান হোসেন শাওন ক্যামেরাম্যান হিসেবে নিয়মিত সংবাদ প্যাকেজ নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর ফলে আল-জাজিরার সংবাদে বাংলাদেশ এক নতুন জায়গা করে নিয়েছে এবং প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দু-একটি বাংলাদেশি খবর প্রচারিত হচ্ছে। ওমর তাসিক বাংলাদেশে আল-জাজিরা সম্প্রচারের দায়িত্বের পাশাপাশি সংবাদ প্রযোজক হিসেবে নিকোলাস হকের সঙ্গে কাজ করে চ্যানেলটিতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রেরণ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বিডিআর বিদ্রোহ, বসুন্ধরা সিটিতে অগ্নিকাণ্ড, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর, বাংলাদেশের সংবাদ প্রচারের স্বাধীনতার ওপর প্রামাণ্যচিত্র, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের অবস্থান, বিশ্বমন্দায় বাংলাদেশের শিল্প-কারখানাগুলোর সার্বিক অবস্থা, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও বাংলাদেশ ইত্যাদি।


আল-জাজিরার বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন ওয়ান ও ওয়ান ইস্ট, পিপল অ্যান্ড পাওয়ার এগুলো সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয় সংশিষ্ট অনুষ্ঠান প্রযোজকদের দিয়ে। এগুলো নিয়মিত করেসপনডেন্ট বা নিউজ প্রডিউসারদের সঙ্গে সংশিষ্ট নয়, এ কারণে অনেক সময় স্থানীয় করেসপনডেন্ট জানতে পারে যে বাংলাদেশে কোনো বিশেষ প্রোগ্রামের চিত্র ধারণ করা হবে। তবে সংশিষ্ট সাংবাদিক যদি লোকাল টিমের সহায়তা না নেন তখন তার দায়ভার স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর বর্তায় না। তবে বেশির ভাগ সময়ই তারা স্থানীয় টিমের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে বর্তমানে যারা আল-জাজিরা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি এবং নিয়মিত চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োজিত আছেন তারা হলেন: ওমর তাসিক (বাংলাদেশ সম্প্রচার প্রধান বাংলাস্যাট ও সংবাদ প্রযোজক), নিকোলাস হক (করেসপনডেন্ট), মো. সুলাইমান হোসেন শাওন (ক্যামেরাম্যান), সেলিম আল মাহবুব (ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশন কো-অর্ডিনেটর বাংলাস্যাট), আঞ্জুমানারা বেগম (ডিষ্ট্রিবিউশন ম্যানেজার বাংলাস্যাট) এবং রাশেদুল ইসলাম (অফিস এক্সিকিউটিভ বাংলাস্যাট)। আল-জাজিরার এই টিম তাদের সব কার্যক্রম এসইএল সেন্টার (৮ম তলা) ২৯ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫ থেকে পরিচালনা করছে।


তথ্যসূত্র : আল জাজিরা ডটনেট ও মিডিয়াওয়াচ

Tuesday, July 13, 2010

ডাক্তার বাড়িতে নানা রঙের দিন


৬ মে ২০১০। বৃহস্পতিবার। সময়টা একটু গরম, এক পশলা মেঘ, একটু বৃষ্টি । চারদিক কেয়া, কদম ফুলের সুবাসিত সৌরভ। রাত তখন বাজে পৌণে দশটা। ফেনীর সোনাগাজী যাবো।

ফেনী বাস স্ট্যাণ্ড থেকে ডানে টার্ণ নিয়ে সোজা সামনে দিকে যাচ্ছি। চারপাশ অন্ধকার। বর্তমান ঢাকার লোডশেডিং এর হাওয়া ফেনীতে ভালমতোই বুঝা যাচ্ছে।

সামনে যাচ্ছি। কিন্তু গাড়ী চালক রনি এর পূর্বে একবার এসেছিল সোনাগাজীতে। ফলে ঠিকমত অন্ধকারে গন্তব্য চিনতে পারতেছিলনা। আর আমি জীবনে এই প্রথম এসেছি।

কী আর করা। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। সামনেই এক বাজার। নাম ধলিয়া। ঔ বাজার ক্রস করতেই রাস্তার বামে ক্রস করতে রিক্সার সাথে আমাদের গাড়ীটা লেগে গেল। চারপাশ অন্ধকার। আমি শুধু চেয়ে দেখলাম রিক্সাচালক ভাইটি মাটিতে পড়ে গেল আর রিক্সাটা উল্টা দিকে ধপাস।

ওহ!! বুকের মধ্যে তখন আমার ৯০ ডিগ্রি হার্টবিট উঠানামা করছে। পরে খোঁজ খবর নিয়ে যানতে পারি রিক্সাওয়ালা কোন গুরুতর আঘাত পাননি। তবুও আমাদের মনে প্রচণ্ড খারাপ লাগল। রনিকে অনেক বলা সত্ত্বেও গাড়ীটা ব্যাক করলনা। আমরা গাড়ীতে বসা সবাই বলতেছি অন্তত রিক্সাওয়ালা ভাইটিকে দুঃখিত বলা দরকার। কিন্তু রনি খুবই শক্ত। ও গাড়ী শাঁ শাঁ করে চালিয়ে নিয়ে গেল নির্দিষ্ট গন্তব্যের প্রায় আধ ঘন্টার পথ দূরে। এমনিতেই বিদ্যুৎ নেই। চারদিকে অন্ধকার। আমরাও খুঁজে পাচ্ছিনা ডাক্তার বাড়িটা।

কী আর করা। বাধ্য হয়ে আবার আমরা উল্টা দিকে আসতে থাকলাম। নানা অস্থিরতার পর খুঁজে পেলাম বাড়িটি।

সুনসান নীরবতা। গাছগাছালিতে পাখিদের কিচির মিচির। মাঝে মাঝে দু-একটা ঝিঝি পোকার শব্দ। ব্যাগ থেকে ফায়ার বক্স (দিয়াশলাই) বের করে গাড়ী থেকে নামলাম। ডাক্তার বাড়ীতে আমরা যে ঘরে থাকব সে ঘরের চাবিটা ছিল ঐ বাড়িতে অবস্থানরত ডা. ইকরামুল হক এর কাছে। তাঁর সেলফোনে কল করতেই উনি ঘর থেকে বের হলেন। সাথে আরো কয়েকজন ( লিমার হাতে চার্জার লাইট )।

আমরা ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম। সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে আসল। দীর্ঘ একমাস পর তালাবদ্ধ ঘর যেন মূহুর্তের মধ্যেই বাতিঘরে পরিণত হল। নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল।

নানা রঙের দিন...

৪ জানুয়ারি, ১৯৬৪ সাল। সেই সময় নাম ছিল চৌধুরী বাড়ী। বর্তমানে ডাক্তার বাড়ী। মাঝে অতীত হয়ে গেছে সর্দার বাড়ী নামটা। বর্তমান মহাজোট সরকার নাম বদলের যে ইতিহাস রচনা করেছেন, এই বাড়ীটি সেই ইতিহাসকে ছাড়িয়ে (সম্ভবত) গ্রিনেজ বুক অব ওর্য়াল্ড-এ উঠে যাবে।

প্রিয় পাঠক, হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ডাক্তার বাড়ীতে আমার প্রথম আসা কিন্তু নানা রঙের দিন- শিরোনাম কেমনে হয়? প্রসঙ্গত বলব, এই বাড়ীতে পরিচয় হয় এক ভাবীর সাথে। বর্তমান বয়স তাঁর প্রায় সত্তর বৎসর। নানান কথা জানতে জানতে উনি বলল, সেই সময়কার নানা রঙের দিনের স্মৃতি।

ডাক্তার বাড়ীর সবাই এই ভাবীকে মুক্তা ভাবী বলে ডাকত। ভাবীর বাপের বাড়ী কুমিল্লায়। ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি গোলাম মোস্তফার সাথে পরিণয়নসুত্রে ডাক্তার বাড়ীতে আসেন।

দেবর-ননদ-ভাসুর-ভাগ্নে-ভাগ্নী-পাড়া প্রতিবেশী সবাই মিলে ২২০ জন ভাবীর বিয়েতে যায়। প্রথম শ্বশুর বাড়ীতে যখন আসেন তখন ভাবী অন্য এক স্বাপ্নিক রাজ্যে অবস্থান করছেন।

চারদিক থেকে সবাই আসছেন তাকে দেখতে। সেই সময় নতুন বউকে সবসময় ঘোমটা পরে থাকতে হতো। শুধুমাত্র স্বামীর সামনে ঘোমটা খুলতে পারতো। অন্য পুরুষের সামনে যেতে পারতনা। উচ্চস্বরে কথা বলতে পারত না। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথা মতো সব কিছু মেনে চলে জগৎ সংসার চালাত। অন্যরকম একটা পরিবেশ ভাবীকে প্রতিদিন পৃথিবীর সোনালী জীবনের এক নাট্যমঞ্চে অভিনয় করতে হতো।

এভাবেই দিন-মাস-বছর পেরোতে থাকে। বছর এক পরেই পৃথিবীতে আসে নতুন এক সন্তান। তখন ভাবী পুরোপরি এক গৃহিনীতে রূপান্তরিত একজন মহিলা। প্রতিদিন স্বামীর অফিসে যাওয়ার সময় সব কিছু প্রয়োজনীয় কাজ গুছানো, বাচ্চাকে লালন করা, শ্বাশুড়ির আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা-ইত্যাদি নানা কাজের সব বিচিত্র সাংসারিক আয়োজনে ব্যাস্ত। এভাবেই দিন কেটে যায় ভাবীর।

কথা প্রসঙ্গে সেই সময় আর বর্তমান সময় এর সাংসারিক কী কী পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে ভাবী জানালেন, বর্তমান সময়টা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর আগের মতো সংসার জীবন নেই। এখন নতুন বউরা ঘরে এসেই স্বামী ছাড়া অন্য কাউকে ( শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী-দেবর-ননদ) সহজে চিনতেই চায়না। বিয়ের পরপরই আলাদা সংসার করতে চায়। যা আমাদের সময় ছিলনা। আর পর্দাতো করতেই চায়না। এমনকি মাথায় কাপড় পর্যন্ত দিতে চায়না।

খুব প্রতিবাদের সুরে বললেন, এই দেখ, কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে সোনাগাজীতে আসতেছিলাম। তো তখন আসরের সময়। মাইকে আজান হচ্ছে। দেখলাম ওই বাসে বারো জন মহিলা ছিল। অথচ আজান শুনার সাথে সাথে মাত্র চার জন মহিলা মাথায় কাপড় দিল। ব্যাপারটা আমার কাছে লক্ষ্যনীয়। আসলে এভাবেই পরিবর্তন হয়েছে এখনকার সমাজ।

জোনাকী পোকার সাথে কিছুক্ষণ

এভাবে ভাবীর সাথে আলাপচারিতায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। সন্ধ্যার আধঘন্টা পরে বিদ্যুৎ চলে গেল। আমি, রনি চলে গেলাম ডা. বাড়ির সামনে রাস্তায়। রাস্তার পূর্বদিকে একটা ছোট সাকোঁ। সাকোঁটার পাশে ছোট্ট ডোবাশয়। তখন অন্ধকার রাত। অথচ এই ডোবাশয়ে দেখলাম হাজারো জোনাকী পোকার মিটিমিটি আলো। সাথে ঝি ঝি পোকার কলকাকলী। রনি আমাকে বলল, সাইফ ভাই, দেখেন আল্লাহর কী অপরূপ সৃষ্টি। প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ হাজার জোনাকী একসাথে আলো ছড়াচ্ছে। আমি জীবনেও দেখিনি। আমরা কিছুক্ষণ জোনাকীর সাথে কাটালাম।

Saturday, June 5, 2010

জানালার পাশে ছোট্টো মেয়ে তোত্তো-ছান




জানালার পাশে ছোট্টো মেয়ে তোত্তো-ছান । এ বইয়ের লেখক কুরোয়ানাগি তেতসুকো হচ্ছেন জাপানের বিখ্যাত কথাশিল্পী, টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের বন্ধুত্বের দূত। তাঁর প্রথম প্রতিনিধিত্বকারী সাহিত্যকর্ম জানালার পাশে ছোট্টো মেয়ে তোত্তো-ছান ১৯৮১ সালে জাপানে প্রথম প্রকাশিত হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত এ বইয়ের জাপানী ভাষা সংস্করণের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৩ লাখ ৮০ হাজার। জাপানে প্রতি তিনটি পরিবারে এ বইটি আছে।

বইটি ৩৩টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়ছে। এ বইয়ের ইংরেজী সংস্করণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশের সময় নিউইয়র্ক ডেইলি পত্রিকায় বইটি প্রসঙ্গে গোটা দু'পাতার মন্তব্য প্রকাশিত হয়। আগে এ পত্রিকা কখনও এমন মন্তব্য প্রকাশ করেনি এবং পরেও করেনি। জাপানের ভেতরেই এ বইয়ের ইংরেজী সংস্করণের বিক্রীর পরিমাণ ৭ লাখে দাঁড়িয়েছে এবং এ পর্যন্ত এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।

জানালার পাশে ছোট্টো মেয়ে তোত্তো-ছান নামে বইটিতে প্রাথমিক স্কুলে অর্জিত একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা লেখক বর্ণনা করেছেন। ৭ বছর বয়সী তোত্তো-ছান বড় মানুষের চোখে অবশ্যই একজন ভালো শিশু নয়। তার দুষ্টুমির কারণে সে স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তার মা একজন বিনম্র নারী। তিনি তোত্তো-ছানকে একটি বিশেষ স্কুলে পাঠিয়েছেন। এ স্কুলে আবর্জনাবাহী রেলপথের গাড়িকে কাসরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শিশুরা যার যার নিজের ইচ্ছা মতো স্বাধীনভাবে বিভিন্ন বিষয় এখানে শেখে। তাদের বসার আসন নেই এবং বিভিন্ন কাসের শিশুরাও একসাথে বসতে পারে। স্কুলের প্রিন্সিপাল সোসাকু কোবায়াশি শিশুদের প্রকৃতিদত্ত প্রশিণের ওপর গুরুত্ব দেন এবং তাদের পুরোপুরি স্বাধীনভাবে লেখাপড়ার অবকাশ যোগান। প্রিন্সিপাল শিশুদেরকে 'পাহাড়ের গন্ধ' এবং 'সাগরের গন্ধের' খাবার অনুরোধ জানায়। পাহাড়ের গন্ধের খাবার যেমন সবজি ও মাংশ এবং সাগরের গন্ধের খাবার তেমন মাছ ও সমুদ্র শেওলা। তিনি প্রত্যেক শিশুদের উত্কৃষ্টতা প্রদর্শনে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করেন। সকালে যদি সব বিষয়ের পড়া শেষ হয়ে যায় তাহলে বিকেলে সবাই মিলে বাইরে বেড়াতে গিয়ে ভূগোল ও প্রকৃতির কাছ থেকে শেখে। রাতে প্রিন্সিপাল শিশুদের নানা ধরনের গল্প শোনান। তাই তোত্তো-ছানের মতো অনেক শিশু মন থেকে সত্যিকারভাবেই মুগ্ধতার ভেতর বড় হয়ে উঠেছে। প্রিন্সিপাল মাঝে মাঝে তোত্তো-ছানকে বলেন, তুমি সত্যিই একটি ভালো শিশু। প্রিন্সিপালের যতেœ এবং সঠিক নির্দেশনায় সাধারণ মানুষের চোখে অবাঞ্ছিত শিশুরা ধীরে ধীরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শিশুতে পরিণত হয় এবং তাদের জন্য সারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি গড়ে ওঠে। তোত্তো-ছান এ স্কুলে অন্যের প্রতি যতœ নিতে এবং জীবনকে ভালোবাসতে শিখেছে। ১৯৪৫ সালে এ স্কুলটি যুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত হয়। এ বইটিতে তোত্তো-ছানের মনের অনুভূতি গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। পাঠকরা তোত্তো-ছানের দৃষ্টি থেকে সে ধরণের বড় হওয়ার প্রক্রিয়া উপভোগ করতে পারেন।

রেডিও চায়না অবলম্বনে

Sunday, May 30, 2010

৭৩৬ জন বন্ধুর সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম


গতরাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতেছিলাম। হঠাৎ আমার মুঠোফোনে একটা মেসেজ আসল। খুলে দেখি ব্রেকিং নিউজ। তাতে লেখা ফেসবুক ব্লকড ইন বাংলাদেশ। মুহূর্তেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। খবরটা নিষ্চিত হবার জন্য রেড়িও এবিসির রাতের শো ক্যাফে ৮৯.২ তে আরজে কিবরিয়াকে মেসেজ দিলাম। উত্তরে বলল, ফেসবুক হেচ বিন শার্ট ডাউন।
হায় আল্লাহ। এটা কী হল। প্রতিদিনের নিত্য যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল ফেসবুক। বিশেষ করে আমার প্রিয় আপু মুক্তি [ বর্তমানে লন্ডনে বসবাসরত ] । তার সাথে আমি ২/৩ দিন পরপরই ফেসবুকে যোগাযোগ করতাম। জাতিসংঘে কর্মরত ভাইয়া জহির [বর্তমানে সুদানে আছেন ] । তার সাথে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ফেসবুক। কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় ৩০টিরও অধিক দেশে আমার সংবাদিক-লেখক-সাহিত্যিক বন্ধু আছে যাদের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারবনা ভাবতেই অবাক লাগে।

Thursday, May 13, 2010

সম্ভাবনার বাংলাদেশ [৮ম কিস্তি ]




[সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। এ সম্পদ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ। এসব সম্ভাবনার কথা নিয়ে এই বিশেষ রচনাটি আরটিএনএন এর পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাইফ বরকতুল্লাহ । আজ প্রকাশিত হল এর ৮ম কিস্তি।]

১. গারোর বুকে মধুটিলা হতে পারে কোটি টাকার রাজস্ব
শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ মধুটিলা ইকোপার্ক এখন হাজারো ভ্রমণপিপাসুর পথ চারণায় মুখর। ময়মনসিংহ বন বিভাগ ১৯৯৯ সাল থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার সমশ্চূড়া ইউনিয়নের ২৯০ একর এবং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ৯০ একরসহ মোট ৩৮০ একর পাহাড়ি টিলার ওপর মধুটিলা ইকোপার্কে এর প্রাথমিক অবকাঠামো ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ দুই দফায় প্রায় ৪কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ করে। এরপর ২০০৬-০৭ অর্থ বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইকো পার্কের যাত্রা শুরু হয়।
শুরুর বছরেই ইকোপার্কের বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয় ৫২ হাজার ৮৩১ টাকা। এরপর ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫৮ টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে আয় হয় ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৬ টাকা।
চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
প্রতি বছর এই পার্কে বিশেষ করে শীত মওসুমে প্রতিদিন শ’ শ” বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে শেরপুরসহ দেশের প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী পিকনিক, শিা সফর ও ভ্রমণে আসে।
সূত্র জানায়, এই ইকোপার্কে বর্তমানে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোটিং, স্টার ব্রিজ, স্ট্রেম্পিং রোড বা সুউচ্চ পাহাড়ে উঠার জন্য ধাপ রাস্তা (সিঁড়ি), মিনি শিশু পার্ক, মহুয়া রেস্টহাউজ, স্টিলের ছাতা, ইকো ফ্রেন্ডলি ব্রেঞ্চ, আধুনিক পাবলিক টয়লেট, পার্কের প্রবেশ পথ ধরে যাওয়া বিভিন্ন সড়কের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জীব জন্তুর ভাস্কর্য।
এছাড়া বিরল প্রজাতি, পশু পাখি আকৃষ্ট, ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান, মৌসুমী ফুলের বাগান এবং সাত রঙের গোলাপ বাগান রয়েছে।
এসব উপভোগের জন্য ইকোপার্কে ঢুকতে প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজন ৫ টাকা এবং শিশু কিশোরদের জন্য ২ টাকা। বাস, ট্রাক ও মিনিবাস ৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ও জিপ ৩০ টাকা, বেবি ট্যাক্সি বা অটো রিক্সা ১৫ টাকা,
এছাড়া ইকোপার্কের ভেতরে পেডেল বোট ১২ টাকা, নৌকা চালানো ৬ টাকা, ওয়াচ টাওয়ারে উঠা প্রতিজন ২ টাকা, নাটক বা চলচ্চিত্রের শুটিং (৮ ঘন্টা) ১০০০ টাকা, রেস্টহাউজ ভাড়া (শুধুমাত্র দিনের বেলা) ৪৫০০ টাকা, শিশু পার্কে ২ টাকা এবং টয়লেটসহ গোল ঘরের (রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া জন্য সুব্যবস্থা) প্রতিদিন ৬০০ টাকা।
মধুটিলা ইকোপার্ক ঘিরে শেরপুরের পরিচিতি দ্রুত প্রসার ঘটায় জেলার সচেতন মহল মনে করছে, সরকারের উচিত এই ইকোপার্ককে পর্যটন খাতে নিয়ে দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র করা হলে সীমান্তবর্তী এই গারো পাহাড় এলাকার অবহেলিত পাহাড়ি জনসাধারণের ভাগ্যের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের রাজস্ব খাতেও যোগ হবে বাড়তি আয়।

২. ব্যাঙ ও ফড়িং দিয়ে মশক নিধন
[ মাত্র কয়েক হাজার টাকায় উৎপাদন করা যাবে লাখ লাখ ব্যাঙাচি ও নিম্ফ ]

ব্যাঙ এবং ফড়িং দিয়ে সহজেই মশা নিধন সম্ভব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার পরিবেশবান্ধব এই সহজ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন। যেকোনো ধরনের মশা জন্মলগ্নেই নিধন করবে ব্যাঙ এবং ফড়িং। তিকর রাসায়নিক মশা নাশকের প্রাকৃতিক বিকল্প হিসেবে শতভাগ সফলতার সঙ্গে এদের ব্যবহার করা যাবে। এতে সাশ্রয় হবে সরকারের কোটি কোটি টাকা। তবে এ জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি দরকার মানুষের সচেতনতা। ব্যাঙ এবং ফড়িং না মেরে তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাশার ব্যাঙ এবং ফড়িং দিয়ে মশা দমনের এ পরিবেশবান্ধব ও সহজ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন।
জানা গেছে, ব্যাঙ, ফড়িং এবং মশা এ তিনটি প্রাণীই তাদের জীবনের প্রথম দশায় পানিতে বাস করে। ব্যাঙের ব্যাঙাচি, ফড়িংয়ের নিম্ফ (অপূর্ণাঙ্গ দশা) এবং মশার লার্ভা (শুককীট) একই ধরনের পানিতে জন্মগ্রহণ করে। জীবনকালের শুরুর এ সহাবস্থানের কারণেই কবিরুল বাশার মশা দমনে ব্যাঙ এবং ফড়িংকে কাজে লাগানোর চিন্তা করেন। পরবর্তীকালে গবেষণাগার এবং উন্মুক্ত জলাশয় উভয় েেত্রই তিনি ব্যাঙাচি ও নিম্ফ দিয়ে মশা দমনে চমৎকার ফল পান। ব্যাঙাচি ও ফড়িংয়ের নিম্ফ মশার লার্ভাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
তিনি জানান, ব্যাঙাচি ও ফড়িংয়ের নিম্ফ দিয়ে মশা দমন সাশ্রয়ী, সহজ প্রয়োগযোগ্য, পরিবেশবান্ধব, প্রাণী তথা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও নিরাপদ। একই সঙ্গে এ পদ্ধতি মানুষকে রাসায়নিক মশানাশকের ব্যবহার থেকে সরে আসতে সাহায্য করবে। ফলে রাসায়নিক মশানাশকের তিকর প্রভাব থেকে রা পাবে মানুষ।

কবিরুল বাশার জানান, জলাশয়ে স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ ছাড়াও গবেষণাগারে খুব সহজেই ব্যাঙাচি বা নিম্ফ উৎপাদন করা যায়। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার কন্ট্রোল ইনসেক্ট রিআরিং হাউস স্থাপন করে বছরজুড়ে ব্যাঙাচি ও নিম্ফ উৎপাদন করা যাবে। হাউসটি স্থাপন করতে খরচ পড়বে প্রায় সত্তর লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র কয়েক হাজার টাকায় উৎপাদন করা যাবে লাখ লাখ ব্যাঙাচি ও নিম্ফ। হাউসটিও ব্যবহারযোগ্য থাকবে আজীবন। হাউনে ব্যাঙাচি ও নিম্ফ উৎপাদন করে ঢাকাসহ দেশের মশাপ্রবণ এলাকাগুলোর জলাশয়ে ছেড়ে দিলে মশা প্রাকৃতিকভাবেই প্রায় শতভাগ দমন করা সম্ভব হবে। ব্যাঙ শুধু ব্যাঙাচি দশায় মশা ভণ করলেও ফড়িং নিম্ফ দশা ও পূর্ণবয়স্ক উভয় দশাতেই মশা খেয়ে থাকে।
কবিরুল বাশার ফাইলেরিয়া বা গোঁদ রোগের বিস্তারে কিউলেক্স মশার ভ‚মিকা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মশাটি দমনের পদ্ধতিগুলো উদ্ভাবন করেন। কিউলেক্স কুইনকুইফেসিয়েটাস মশা ফাইলেরিয়া রোগের বিস্তার ঘটায়। ঢাকার মশার মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই হচ্ছে এই কিউলেক্স মশা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে বিশ্বের ৭৩টি দেশের বারো কোটি লোক ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও মেহেরপুর জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। রোগটি দমনে ওইসব অঞ্চলে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি ডোজ বিলিয়ে থাকে। এ প্রজাতির মশা ডোবা, নর্দমা, নালা, ড্রেন, পচা পুকুর ও জমে থাকা ময়লাপানিতে বংশবিস্তুার করে। এসব পানিতেই জন্মে ব্যাঙাচি ও নিম্ফ।
তিনি জানান, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার জন্য কন্ট্রোল ইনসেক্ট রিআরিং হাউস স্থাপন করতে হবে। এজন্য তিনি এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাবর সত্তর লাখ টাকার একটি প্রজেক্ট দাখিল করেছেন। প্রজেক্ট পাস হলে বছরজুড়ে সারা দেশের মশা নিধনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নিম্ফ ও ব্যাঙাচি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন মশাপ্রবণ এলাকার জলাশয়গুলোতে নিম্ফ ও ব্যাঙাচি ছেড়ে দিলে মশা নিধনে সরকারকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাসায়নিক মশানাশক ব্যবহার করতে হবে না। বরং প্রাকৃতিক উপায়েই মশা প্রায় শতভাগ দমন করা সম্ভব হবে। তবে এর জন্য সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সচেতনতাও দরকার। ব্যাঙ এবং ফড়িং না মেরে তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যাঙাচি ও নিম্ফ দিয়ে একমাত্র এডিস মশা নিধন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া অন্যান্য সকল প্রকারের মশাই নিধন করা যাবে।
৩. আলু রফতানির অপার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় আলু রফতানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ভারত উল্লেখিত দেশগুলোতে কমবেশি প্রায় ২শ মার্কিন ডলারে প্রতিটন আলু রফতানি করছে। অপরদিকে পাকিস্তান রফতানি করছে প্রতিটন প্রায় ১শ ৯০ মার্কিন ডলারে।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশ থেকে দুবাই আলু রফতানি করা হয়েছে টন প্রতি প্রায় ২শ ২০ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশকে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববাজারে আলু রফতানি করতে হলে তাদের কাছাকাছি দামে আলু রফতানি করতে হবে অথবা আলু রফতানির অনুক‚লে নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে দুবাই, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বে আলু রফতানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে বলে রফতানিকারকরা জানান। উল্লেখ্য, সারাদেশে এ মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকার আলু বীজ, সার ও কীটনাশক ওষুধের মূল্য হ্রাস করায় এবং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকার কারণেই এবার আলু উৎপাদনের ল্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

চলতি বছর দেশে প্রায় ৭৫ লাখ টন আলু উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন ল্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গিয়ে কমবেশি ১ কোটি টনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুতরাং উপরের বিষয় সমূহ যদি প্রপারলি ইম্পি­মেনটেশন করা যায় তবে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।
[ চলবে ]

তথ্যসূত্র : ১.দৈনিক ইত্তেফাক ২. দৈনিক নয়াদিগন্ত ৩. আরটিএনএন ৪.দৈনিক সমকাল

Wednesday, May 5, 2010

উপন্যাসের উপাত্ত প্রয়োজন শুধু প্রেম উপজীব্য নয়


সাইফ বরকতুল্লাহ : লেখালেখির শুরু কবে থেকে?
তাহমিনা কোরাইশী : ছোট বেলা থেকে সাহিত্য পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা। শানি-নগর নানা বাড়ির শেষ মাথায় প্রফেসর মনসুর উদ্দীনের বাড়ি। তিনি আমার নানীর বড় ভাই। আমার খালা লেখিকা হাজেরা নজরুল। এ বাড়িতে অনেকেই আসতেন কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। প্রথম লেখার হাতেখড়ি ১৯৬৬ সালে স্কুলের দেওয়াল পত্রিকায়। তখন থেকে জাতীয় দৈনিকে লিখেছি ছোটদের পাতায়। গল্প, কবিতা, ছড়া। দৈনিক আজাদের মুকুলের মহফিল, ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর, পাকজমাহুরিয়াত, বাংলার বাণীর সাত ভাই চম্পা, পূর্বদেশের চাঁদের হাট, দৈনিক জনকণ্ঠ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখেছি।
ছোটদের পাতায় লিখতে লিখতে আমার বেড়ে ওঠা। ঐ সময় যারা আমার সাথে লিখেছে সেই বন্ধুরা আজ প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত লেখক। অনেকেই এক নামে পরিচিত। সুখ্যাতির শীর্ষে তারা। আমি ওদের সঙ্গে চড়তে পারিনি সিঁড়ি। কিন' আমি খুশি কারণ ওরা আমার বন্ধু।

আমরা জানি আপনি বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এইযে সাহিত্যচর্চা, চাকরি, সংসার, সন-ান, লেখাপড়া একসাথে কি ভাবে করলেন? ১৯৭৬ সাল পর্যন- লেখালেখির মধ্যে ছিলাম। আমার অবশ্য বেশ অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। যখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ১৯৭৩ জানুয়ারিতে বিয়ে হয় মুক্তিযোদ্ধা ওমর কোরাইশীর সাথে। সেই নতুন পথে যদিও বাধা ছিল না। তবুও ঘর-সংসার-সন-ান-লেখাপড়া তার সাথে লেখালিখি। বেশ কষ্ট হয়েছে। তবুও আনন্দের সঙ্গে চাকরিও নিয়েছি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইসেন্স বিভাগে। তখন চাকরির জন্য চট্টগ্রামেই থেকেছি। আমার স্বামীর ব্যবসার কাজে সুবিধার জন্য চট্টগ্রামে প্রায়ই থেকেছি। সব কিছু মিলিয়ে একেবারে নাকাল অবস'া। তাই কিছুকাল বিরতি আমার লেখালিখির। শুরু হয় তিনটা পুত্রসন-ানকে বড় করার যুদ্ধ। স্বামী ব্যবসায়ী কখনও দেশের বাইরে কখনও দেশেই অবস'ান এক এক সময় এক এক জায়গায়। চাকরিতে আমি বিদেশ বা স্বদেশ কোথায়ও স্পোর্টিং-এ যাইনি শুধু সন-ানদের কারণে।

এভাবেই চাকরি জীবনের ২৭ বছর পার করেছি। কমার্শিয়াল কর্মকর্তা হিসেবে ২৩ বছর চট্টগ্রাম এবং ৪ বছর ঢাকায়। ব্যবসায়ী স্বামী চট্টগ্রামেই তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

কি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? মনে যখন যে বিষয় অনুরণন তোলে তাই লেখার চেষ্টা করি। মনে করেন যখন কোন গল্প লিখি তার ফাঁকে ফাঁকে ছড়া লিখতে পছন্দ করি। এর মানেই এই নয় যে ছড়া লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস সবই লেখার চেষ্টা করি। উপন্যাসের উপাত্ত প্রয়োজন, শুধু প্রেম উপজীব্য নয়। প্রেম বিরহ তো আছেই আঞ্চলিক উপাখ্যান, তথ্য-উপাত্তভিত্তিক, সৃষ্টিধর্মী এসবও ভীষণ প্রয়োজন। উপন্যাস বড় ক্যানভাসের বিষয়। তাই সময় নিয়ে লিখবো। একটা উপন্যাস অবশ্য লিখেছি।

আপনার একটা ছড়ার বই এর নাম ‘হৈলুল্লোড়’। এ নাম সম্পর্কে যদি কিছু বলেন ? আমার নাতনির বয়স যখন এক বছর তখন ওর জন্য একটা ছড়ার বই লিখি। বেশির ভাগ ছড়াগুলোই ওর নামে বইটির নাম “হৈলুল্লোড়”। সে এখন সাড়ে চার বছরে। বলে দাদী ঐ বই এর ছড়া সব আমার মুখস-। পড়া শেষ। আরো বই লিখো আমার জন্য। ইচ্ছে আছে আরো লিখার।
আপনার লেখার মধ্যে বারবার মুক্তিযুদ্ধ উঠে আসছে এর কারণ কি? আমি তো একজন মনে-প্রাণে মুক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। সেই রাতে মানে ২৫ শে মার্চের রাতে আমার হাতধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল নরপশু পাকিস-ানী সৈন্যরা। আল্লাহ্র অশেষ রহমত বেঁচে গেছি। মিরাকেল ঐ রাতে যে বাড়িতে ওরা গেছে সে বাড়িতে কেউ কি বেঁচেছে? সেই আতঙ্কিত মুহূর্ত আমার পিছু ছাড়েনি বহু বছর। সেই উত্তাল মাচের্র দিন। চারদিকে রাজনীতির লু হাওয়া। আমার নানী বাড়িতে বেড়াতে গেছি। আমার বয়সী আমার ছোটখালা ওর পিড়াপিড়িতে রয়ে গেলাম। ছোটমামা তখন সবুজবাগে থাকতেন। মেজখালা খালু তার ছেলেমেয়ে এ বাড়িতেই। বিকেল থেকে অবস'া ভালো না। রাত যত বাড়ছে থমথম পরিবেশ। খালা বললেন ক্যু হয়ে যাবে। আর্মি নামলে কি হয় বলা যায় না। পুলিশ লাইন পাশেই। তোরা খাটের নিচে চুপ করে থাক। রাত ১২ টার পর থেকে গোলাগুলির আওয়াজ। রাত যত বাড়ছে ততই কাছে আসছে বীভৎস শব্দ। পাশের বড় রাস-ায় ট্যাঙ্কের আওয়াজ, ভারি যানবাহনের আওয়াজ, গোলাগুলির আওয়াজ তীব্র হলো। রঙ্গীন তীব্র আলোর ঝলকানি দরজা জানালার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে আসছে। আগুনের পোড়া গন্ধ। পুলিশ লাইন পুড়ছে গোলা বারুদের তীব্র গন্ধ বাতাসে। রাত তিনটা কি সাড়ে তিনটা বাজে। বাইরে আমাদের বিশাল টিনের গেটে বুটের লাথি এবং রাইফেলের বাটের বেদম শব্দ। গেট ভেঙ্গে তারপর ঐ একই ভাবে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ওরা ভেতরে। ভাঙ্গা দরজার পাল্লা দিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর ৬/৭ জন ভেতরে। মিশক্রিয়েন্ট কাঁহা? মিশক্রিয়েন্ট!
খালাখালু আমরা সবই সামনে দাঁড়িয়ে আয়তুল কুরশি, কালেমা তৈয়ব, সুরা ফাতেহা, সুরা এখলাস সব গড়গড় করে পড়তে লাগলাম। তোদের বিশ্বাস করাতে মরিয়া হয়ে উঠিলাম। আমরা মুসলমান। এদের মধ্যে একজন সিপাহী আমার হাত ধরে হেচকা টান দেয়। আমি ভয়ে চিৎকার করি। খালা হাত জোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চায়। বলে আপকা লারকি কা মাফিক। প্লিজ উসকো ছোড় দিয়ে। উসকো ছোড় দিয়ে। কান্নার রোল ঘরময়। কি জানি কি হলো। আল্লাহর রহমতে নাজির হলো ঐ মুহূর্তে ওখানে । ওদের মধ্যে ছিল এই সৈন্যদের কমান্ডার সে বললো, ছোড় দি জিয়ে....
বলে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।
আমি তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়! হার্ট বিট উচ্চ মাত্রায় ছিল। খালা বললেন। এখন রাত চারটা বাজে ওরা আবার আসবে। তোদের দুইজন মেয়েকে দেখে গেছে। এর পরে আসলে সোজা ভেতরের দরজা দিয়ে বাগানে চলে যাবি। সেই আতংক কাটেনি। যদি মরে যেতাম, যদি ধরে নিয়ে যেত। কত কিছুই তো হতে পারতো। অনেক কাল কাউকেই বলিনি নিজের মধ্যে নিজেই জ্বলেছি।
মূলত এটাই কারণ।

এছাড়া লেখার মধ্যে আর কোন্ কোন্ বিষয় এসে যায় আপনার? মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় তো আছেই। মানুষের জীবন, তাদের দু:খ-কষ্ট, অধিকার, নারীর চাওয়া-পাওয়ার ইচ্ছে কত কি তুলে নিয়ে আসি বন্ধ্যা জীবন থেকে উত্তরণ। শুধু নারী কেন, সমাজের অবক্ষয়। এ যুগের ছেলেমেয়েরা যুযোপযোগী হয়ে বেড়ে ওঠা। আলোর নিচে আঁধারকে চিহ্নিত করা। বহুমাত্রিক উপাদান থাকতে হয় লেখায়। আমি যখন ছোটদের জন্য লিখি অর্থাৎ শিশুতোষ তখন আমার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা শিশুমনটি নড়েচড়ে বসে। ভালোলাগে ওদের জন্য কিছু লিখতে। ছড়ার-ছন্দে কবিতায় সুবাসে গদ্যের বিশ্লেষণে বড় ক্যানভাসে উপন্যাস লেখার ইচ্ছে অবশ্যই আছে।

আমরা জানি আপনার কোন ভাই ছিল না। সেক্ষেত্রে ভাইয়ের অনুপসি'তি অনুভব করতেন ? মা নূরজাহান খান। আমরা ছয় বোন। ছয় বোনই চাকরি করি। কেই ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার কেউ সরকারি কর্মকর্তা। স্ব স্ব ক্ষেত্রে সবাই
প্রতিষ্ঠিত। ভাই নেই বলে আমাদের বাবা মায়ের কোন দু:খ ছিল না। ছেলেদের মতো করেই তারা আমাদের মানুষ করেছেন। মেয়েরাও বাবা-মাকে সুখের চাদরে জড়িয়ে রেখেছে। ছয় মেয়ের স্বামীরা খুবই ভালো। আমার মা বাবা চাইতেন আমরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠি। আমার বাবা খুব শানি- মাটির মানুষ ছিলেন। আমরা মাকে ভয় পেতাম।

এই যে আপনার সাহিত্যচর্চা এতে কার উৎসাহ বেশি ছিল? প্রথমত নিজের মধ্যে কিছু থাকাটাই বেশি প্রয়োজন। সেই ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটে লিখনিতে। জীবনের প্রথম শব্দটি মা। ছোটবেলা মায়ের উৎসাহই বেশি প্রয়োজন। মা সবসময়ই বলতেন লেখার অভ্যাসটা যেন না ছাড়ি। আমার আবার সেলাই, রান্না, গাছ-পালা অনেক ধরনের শখই ছিল। মা বলতেন অন্য কিছু কিনতে পাওয়া যাবে কিন' প্রতিভা নিজের ওটাকে লালন করতে হয়। চর্চা করতে হয়। পরবর্তীতে স্বামী সব ব্যাপারেই উৎসাহিত করতেন। লেখালেখি, চাকরি, সেলাই, রান্না আমাকে একজন বায়োনিক ওম্যান হিসেবেই চাইতেন। সব ব্যাপারেই আমি সবার ওপরে থাকি। কিন' তা কি সম্ভব। নিজের সীমাবদ্ধতাও তো আছে।

আপনার বই এর সংখ্যা কত? এ যাবৎ মাত্র ১৮টি বই আমার বেরিয়েছে। শিশুতোষ বই, ছড়া আমার খেলার সাথী, টুপুর টাপুর মিষ্টি দুপুর, হৈলুল্লোড়, ছড়ার বনে হারিয়ে যাবো কিশোর গল্পের বই, বামন মামা, পল্টুর কাঁঠাল চুরি গল্প গ্রন', হলদে পাতার গুঞ্জন, অমানিশার আগুন, কুয়াশার দেওয়ালে যে সূর্য, উপন্যাস, যে জলে চন্দন ঘ্রাণ কাব্যগ্রন', খোলা চিঠি, তখন এখন, হঠাৎ তোমাকে দেখা, ফিরে কি আসা যায়, দিনের পরে বেঁধেছি নূপুর।

আপনার চাকরি জীবন কেমন কেটেছে? এয়ার লাইন্স এর জব চার্মিং জব। সুযোগ-সুবিধা এবং স্যালারি সবই ভালো। বিশেষ করে দেশ ভ্রমণের সুবিধা। ফ্রি টিকেটে অনেক দেশ ঘুরেছি। লন্ডন, আমেরিকা, নেপাল, মালয়েশিয়া, হংকং, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সৌদি আরব, ভারতের বিভিন্ন স'ানে।

আপনার শৈশব সম্পর্কে অথবা বেড়ে ওঠার গল্পটা যদি বলেন? পিছনে ফিরে তাকাতে ভালোলাগে। হাতছানিতে ডাকে বর্ণীল সেই শৈশব। বলে আয় ফিরে আয় কাঁচা-মিঠে স্বাদে। সত্যি ছিল মধুর সেই ছোট বেলা। ভাবুক মন তখন থেকেই ভাবনার দোল খেতো। চুরি করে কাঁঠালের মোচা মরিচ-বাটা-লবনের যৌথস্বাদে কী যে উপভোগ্য ছিল! যদিও শহরেই মানুষ হই তবুও পেয়েছি গ্রাম বাংলার স্বাদ।
জন্ম নানার বাড়ি শানি-নগরে। ১৯৫৪ সালের ১৪ই নভেম্বর। বাবা রেলওয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। ফলে ঢাকার বাইরেও কাটাতে হয় কিছুু সময়। কিন' লেখার শৈশব-কৈশোর বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। শানি-নগরের তেঁতুলতলার বাড়িতে শৈশব কেটেছে। তারপর বাবা বাড়ি করে এলেন সবুজ বাগ বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে। সেই বাষট্টির কথা। তখন ঐ দিকটা কে গ্রামই বলা চলে। সন্ধ্যা হলেই শেয়াল ডাকতো পাশেই পুকুর, ডোবা এবং বিশাল ঝিল ছিল। বুড়িগঙ্গার পানিতে ভরে থাকতো। কত যে সাঁতার কেটেছি ঐ জলে, নৌকায় বেড়িয়েছি। পুকুরে মাছ ধরেছি। আজ আর ঐদিন কোথায়? ধান ক্ষেতগুলোর জায়গা জুড়ে এপার্টমেন্টের দৌরাত্ম্য।
আগের দিনে প্রতিটি বাড়িতে ফুল ফলের বাগান ছিল। আমাদেরও ছিল শেগুন, মেহেগনি, বকুল, কদম, শেফালি, হাসনাহেনা, গোলাপ, বেলী, পেয়ারু, আম, জাম--নিজের হাতে মায়ের সাথে আমরা সব বোনেরা কাজ করেছি। গাছের শখ এখনও রক্তে নেশা জাগায়। বাধ্য হয়ে আমাদের গাছ কাটতে হয়েছে। জীবনের প্রয়োজনে। বাসস'ানের
প্রয়োজনে। এপার্টমেন্ট তৈরি করেছি আমরাও। আমরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। আমার মা আরো বেশি। এই টুকু সান-্বনা মা তার সেগুন গাছটির একটি পালঙ্ক তৈরি করেছেন। ওটাতেই মা ঘুমান।

জীবনকে কিভাবে দেখেন? জীবনে চড়াই উৎরাই তো আছেই। সেই বাঁকগুলো সার্থকভাবে চলতে পেরেছি । অল্পে ভেঙ্গে পড়িনি কখনও। সোনা পুড়ে খাঁটি হয়, সম্পর্ক পুড়ে রয়ে যায় কিছু ব্যথা। তবুও ওতে সুখ আছে। জীবন কঠিন পাথুরে রাস-া পথ কেটে কেটে নিজেই তৈরি করেছে পথ। এতে আনন্দ অনেক বেশি। যতটুকু অর্জন নিজেদের ঘামে, শ্রমে। কেউ হাতে তুলে দেয়নি কিছু।

আপনি বলেছিলেন আপনার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। দুই নম্বর সেক্টরের খালেদ মোশারফের আন্ডারে ছিলেন। ওর বন্ধু মানিক মুক্তযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। যখন ওরা মেলঘর ক্যাম্পে ছিল তখন বেশ মন খারাপ করতো বেশির ভাগ ছেলেরাই। মানিক ভাইকে ও ক্ষেপাতো কি মা মা করিস! মায়ের জন্য কাঁদিস। আমি তো মা কাকে বলে কিছুই বুঝি না। ওর চার বছর বয়সে মা মারা গেছে ১২ বছরে বাবা। ওমর কোরাইশী এখনও একটা সবুজ মনের মানুষ।

কোথায়ও অপূর্ণতা আছে কি? জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে উৎরে গেছি। তিন ছেলেকে মানুষ করতে পেরেছি। বড় দুটোকে বিয়ে করিয়েছি। একটা নাতি আছে সাড়ে চার বছরের। বড় ছেলে ওর বাবার সাথে ব্যবসা শিখে গেছে। দ্বিতীয় ছেলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আছে। তৃতীয়টা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
অপূর্ণতা একটু তো আছেই। যতটুকু লেখকসত্তার বিকাশ ঘটার কথা ছিল ততটা হয়নি। ইচ্ছে তো আকাশ ছোঁয়ার। নিজের অবস'ান দৃঢ় করার। অতৃপ্ত মন আমাকে করেছে কাঙালি। চেষ্টা করে যাবো কিছু ভালো লেখা লিখবার। সময়ের সাথে পাল্লায় হেরে গেছি। ৬০/৭০টি বই হয়নি ঠিকই কিন' চেষ্টা করবো ভালো লেখার।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Tuesday, April 6, 2010

কাজীর গাঁ-তে কয়েক ঘন্টা, কাজী জহিরের সাথে একদিন



কাজীর গাঁ-তে কয়েক ঘন্টা, কাজী জহিরের সাথে একদিন
এবং প্রথম আলোর ইকবালের বিয়ে প্রসঙ্গ


বুধবার, ২৪ মার্চ ২০১০। শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রেডিও তেহরানের সাংবাদিক এমএম বাদশাহ’র সাথে চা খাচ্ছিলাম। তখন ঘড়িতে বাজে সন্ধ্যা পৌনে আট। হঠাৎ আমার সেল ফোনে ক্রিং ক্রিং শব্দ। প্যান্টের পকেট থেকে সেল ফোন টা বের করে স্ক্রীনে দেখি এক অপরিচিত গ্রামীণ নাম্বার। রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসল, আপনি সাইফ বলছেন? আমি ইয়েস বলতেই উনি বলল, আমি কাজী জহিরুল ইসলাম বলছি। ও আল্লাহ! আমার মনে তখন একশত ষাট ডিগ্রি হার্টবিট বেড়ে গেছে। উনি আমাকে ফোন !!!। অবশ্য লন্ডন থেকে মুক্তি আপু ফেসবুকে আমাকে জানিয়েছিল, জহির দেশে যাচ্ছে এক সপ্তাহের ছুটিতে। যাই হোক দেড় মিনিটে কথোপকথনে উনি বলল, আমি গত সোমবার এসেছি, আগামী সোমবার চলে যাবো। শুক্রবার সকালে আমার বাসায় আসবেন। ফোন করে ঠিকানা জেনে নিবেন।

বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০১০। সকালে অফিসে এসে ফোন দিলাম জহির ভাইকে। তাঁর বাসার ঠিকানা দিলেন, বললেন, আগামীকাল [২৬ মার্চ ] শুক্রবার, সাইফ আপনি যদি ফ্রী থাকেন, চলেন ঘুরে আসি গাজীপুর। যাকে কোনদিন দেখিনি, শুধু অনলাইনে কথা হতো, চ্যাট হতো, অনলাইনেই তাঁর কাছ থেকে পত্রিকার জন্য লেখা নিয়েছি, তাঁর এমন প্রস্তাবে রাজী না হয়ে পারলাম না। অবশ্য আমিও গত কোরবানী ঈদের পর কোথাও যেতে পারিনি অফিস-পড়াশুনা-লেখালেখি প্রচণ্ড যান্ত্রিক জীবন আমার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কাজি জহিরুল ইসলাম জাতিসংঘের আর্ন্তজাতিক কর্মকর্তা হলেও মূলত একজন কবি, কথাশিল্পী। বিশ্ব ভ্রমণের উপর লিখে চলেছেন নানা বর্ণিল সব গদ্যরচনা। ইতিমধ্যেই তাঁর ২৫টিরও বেশি গ্রন্থ বেরিয়েছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে লিখছেন অনবরত।


শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০১০। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম গুলশান নিকেতনের উদ্দেশ্যে। আমি সময়ের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। উনি আমাকে সময় দিয়েছিল সকাল ১০টা। মীরপুর থেকে আমি ৯.৫২ মিনিটে গুলশানে উনার বাড়ীর গেটে গিয়ে ফোন করি। ফ্যাট বাড়ী। সুন্দর সাজানো সিড়ি। লিফটে চলে গেলাম চারতলায়। কলিং বেল টিপটেই জহির ভাই হাসিমুখে দরজা খুলে বলে, ওহ! সাইফ, আসেন। ড্রইং রুমে ঢুকেই দেখি দুইজন সাংবাদিক। বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে এসেছে সাাৎকার নিতে। দীর্ঘ সাাৎকার নিতে সাংবাদিকের উপর আমারই প্রচণ্ড মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিল।

এরই মধ্যে চলে আসল অবনী অনার্য। কবি ও নির্মাতা অবনী সমপ্রতি একটি মুভি তৈরি করছেন। অবনীর সাথে কথা বলতে বলতে সাাৎকার পর্ব শেষ করে সাংবাদিকরা চলে গেল। এর পর শুরু হল আমাদের আয়োজন। দেরী না করে চকলেট খেতে খেতে জহির ভাই, অবনী এবং আমি বের হলাম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।

আমরা যাচ্ছি। ছোট একটি প্রাইভেট কারে জহির ভাই সামনে সিটে। অবনী আর আমি পেছনের সিটে বসে গল্প করছি। সাঁ সাঁ করে গাড়ি এয়ারপোর্ট আতিক্রম করল। স্বাধীনতা দিবস থাকায় রাস্তায় খুব একটা যানজট নেই। গল্প হচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতি, জহির ভাইয়ের দীর্ঘ বিদেশে থাকার নানা অভিজ্ঞতা, জাতিসংঘে কর্মররত জহির ভাইয়ের বিভিন্ন স্মৃতি এবং আমাদের ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গ। আবহাওয়া খুবই চমৎকার। গরম খুব একটা নেই। আমরা যাচ্ছি। বেলা ১২ টায় পৌঁছে গেলাম গাজীপর শ্রীপুর টেপির বাড়ী। পাশেই কাজীর গাঁ।

আমরা ঢুকে গেলাম কাজীর গাঁ-তে। সাড়ে চার বিঘা জমির চারপাশে সুসজ্জিত ইটের তৈরি বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে আম, জাম, কাঠাল, লিচু, নারিকেল, জলপাই, কলা, পেঁপে, জামরুলসহ রকমারি ফল ও ফুলের গাছ-গাছালিতে ভরা। প্রকৃতির নির্মল সব আয়োজন এখানে আছে। আছে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীদের জন্য একটা ঘর।

ঘরটার উপরে ছনের চাল। আমাদের আঞ্চলিক ভাষা চাল। চাল এর ভালো বাংলা হল ছাদ । মেঝেটা পাকা করা। চারপাশ খোলা । শুনলাম এই ঘরে নাকি মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে নাটকের শুটিং এর জন্য বিভিন্ন নাট্যদল ছুটে আসে। তো আমরা কিছুটা সময় কাজীর গাঁ-তে এসব প্রকৃতির সাথে থাকতে থাকতে ২টা বেজে গেল। ঔ ঘরটাতে খাবার এর আয়োজন হল। ভাত, পাট শাক, ইলিশ মাছ ভাজি, মুগীর মাংস, গরু মাংসের ভোনা, দুধ, ইত্যাতি বিশাল আয়োজন। আমরা তিনজনসহ ওখানকার কয়েকজন খেলাম খুবই মজা করে। কাজীর গাঁ-বাড়ীটার কেয়ারটেকার মামার স্ত্রী অসাধারণ রান্না করেছিল।

খাওয়া দাওয়া সেরে আরো কিছুটা সময় ঘুরে দেখলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা পেঁপে গাছে পেকে আছে পেঁপে। মামী পেঁপেটাকে গাছ থেকে পেরে জহির ভাইয়ার জন্য ব্যাগে দিয়ে দিল। সময় তখন বিকেল পৌনে চারটা। মন চাইছিলনা ওখান থেকে ঢাকায় আসতে। কিন্তুু যেতে যাহি নাহি চায়-তবু যেতে হয়-এই অমোঘ সত্যকে ভেবে আমরা বিদায় নিলাম এই কাজীর গাঁ থেকে।


ফিরতে ফিরতে ঢাকায় তখন সন্ধ্যা। জহির ভাই বলল, চলেন, আমি একা, ইকবালের বিয়েটা খেয়ে আসি। ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বর্তমানে প্রথম আলোতে কর্মরত। উইকলি সাপ্লিম্যানট ছুটির দিন দেখেন। প্রথম আলোরই আরেকটা উইকলি সাপ্লিম্যানট নকশার সামার সাথে বিয়ে। আমরা চলে গেলাম ধানমণ্ডির ফর সিজন রেস্টুরেন্টে। বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে রাত ১০টায় জহির ভাইকে বিদায় দিয়ে ফিরলাম বাসায়। অনেকদিন পর পরিতৃপ্তির একটা দিন কাটালাম।

Saturday, March 27, 2010

সম্ভাবনার বাংলাদেশ [৭ম কিস্তি ]


সম্ভাবনার বাংলাদেশ [৭ম কিস্তি ]

[সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। এ সম্পদ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ। এসব সম্ভাবনার কথা নিয়ে এই বিশেষ রচনাটি আরটিএনএন এর পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাইফ বরকতুল্লাহ । আজ প্রকাশিত হল এর ৭ম কিস্তি।]


১. দেশে ৪০ লাখ মিনি ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে

বাংলাদেশের ডেইরি খাতের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ মিনি ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে পারলে এর মাধ্যমে দুধ, সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় সোয়া কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে।

গভর্নর বলেন, ¯^‡`wk উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের জন্যই এ বায়োগ্যাস প্লান্ট চালু করা হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি হলেও মানুষ আগের চেয়ে অনেক ভালো রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মক্ষম সব মানুষ কাজ করছে। দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নতুন যুদ্ধ চলছে।

গবেষণার ফলাফল উদ্ধৃত করে তিনি জানান, বাংলাদেশে ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ডেইরি ফার্মের সম্ভাবনা রয়েছে। যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে প্রায় ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস, ২৪০ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক সার, ৫ মিলিয়ন টন ভার্মি কম্পোস্ট, ১৭ বিলিয়ন লিটার দুধ, প্রতি ১৪ মাসে ১৬ মিলিয়ন বাছুর, ১ মিলিয়ন টন মাংস এবং ২৬ মিলিয়ন বর্গমিটার চামড়া এবং ৩ লাখ টন হাড় পাওয়া যাবে।

গভর্নর বলেন, এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হলে প্রচুর পরিমাণে দুধ, সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং এ খাতের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।


২. সম্ভাবনাময় সমুদ্র সৈকত সোনারচর
সম্ভাবনাময় সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালীর গলাচিপার সোনারচর হতে পারে পর্যটকদের জন্য তীর্থস্থান। দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। সেই সঙ্গে বাড়তি আনন্দ দেয় জেলেদের নৌকায় জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য।
বনাঞ্চলের দিকে তাকালে সহজেই দেখা যাবে বুনোমোষ। ভাগ্য সহায় হলে দেখা হয়ে যেতে পারে হরিণপালের সঙ্গে। এখানে আরো দেখা যাবে বন্য শূকর, বানর, মেছো বাঘসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। দেখা যাবে সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবন সংগ্রামের দৃশ্য। সোনারচরে সোনা নেই তবে আছে সোনা রঙের বালি। বিশেষ করে শেষ বিকালের সূর্যের আলো যখন সোনারচরের বেলাভূমিতে পড়ে, তখন দূর থেকে মনে হয় পুরো দ্বীপটি যেন একটি সোনার থালা। কাঁচা সোনা লেপ্টে দেয়া হয়েছে এ দ্বীপটিতে।

এলাকাবাসীর ধারণা উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে সোনারচর। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাদরে ঢাকা এ দ্বীপটিতে নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়ে। অপরূপ সোনারচর ¯^Y©vjx ¯^‡cœi মতোই বর্ণিল শোভায় ঘেরা। প্রায় ১০ হাজার একর এলাকাজুড়ে ¯^gwngvq প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ দ্বীপটি। এখানে রয়েছে পাখ-পাখালির কলকাকলিতে মুখরিত বিশাল বনানী। যা শীতের সময় পরিণত হয় বিভিন্ন প্রকার অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে।

সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা এখানে এলে সোনারচরের মনমোহনীয়রূপ তাদের মুগ্ধ করবেই। ১৯৫০-এর দশকে গলাচিপা উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠে সোনারচর। পর্যায়ক্রমে চরটি পরিপূর্ণতা লাভ করলে ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বন বিভাগ বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ জাতের গাছের বাগান গড়ে তোলে এবং এরপরই বন বিভাগ তৈরি করে একটি ক্যাম্প ও গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য গড়ে তোলে একটি বাংলো। গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পানপট্টি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে আগুনমুখা নদী পেরিয়ে ডিগ্রি নদীর বুকচিরে কিছুদূর এগোলেই বুড়াগৌরাঙ্গ নদী। সামনে গিয়ে বায়ে ঘুরতেই দাঁড় ছেঁড়া নদীর দু’পাশে দাঁড়ানো সারি সারি ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের বাগান। নদীর বুকজুড়ে গাঙ শালিকের অবাধ বিচরণ। সামুদ্রিক হাওয়ার মৃদুছোঁয়া সব মিলিয়ে অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর ভালো লাগার অনুভূতি। এভাবে ঘণ্টা তিনেক এগোলেই চোখে পড়বে প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত সববয়সী মানুষের হৃদয় হরণকারী মায়াবী দ্বীপচর তাপসী আর এ থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা সামনে এগোলেই প্রতীক্ষিত সোনারচরের দেখা মিলবে।
এছাড়া প্রকৃতির হাতেগড়া চরমৌডুবি, জাহাজমারা, চরতুফানিয়া, চরফরিদ ও শিপচরসহ বেশকিছু দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। দ্বীপগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারলে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।

৩. আখের ছোবড়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন

দেশের চিনিকলগুলোতে চিনির পাশাপাশি আখের ছোবড়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ লক্ষে চিনিকলগুলোতে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। গত রোববার শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া শিল্প ভবনে চিনি শিল্প করপোরেশনসহ সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। দিলীপ বড়ুয়া জানান, চিনিকলগুলো দ্বৈত (চিনি ও বিদ্যুৎ) উৎপাদন ক্ষমতার সরঞ্জামাদি স্থাপনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে, যাতে আখের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। মন্ত্রী বলেন, চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে পরিত্যক্ত তরল পদার্থ (চিটা গুড়) ব্যবহার করে মদ উৎপাদনের চিন্তাভাবনাও করছে সরকার। ডিস্টিলারি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য কয়েকটি চিনিকলকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্তত দুটি কারখানাকে এ জন্য চূড়ান্ত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দেশে বর্তমানে চিনির চাহিদা প্রায় ১২ লাখ টন। কিন্তু দেশীয়ভাবে এ বছর চিনির উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টন। বাকি পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। চিনি শিল্প করপোরেশনকে এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ এবং দ্রুত চিনি আমদানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই সব প্রক্রিয়া শেষে চিনি আমদানি করা হবে।

৪. বৈদেশিক আয়ের উৎস হতে পারে সুন্দরবনের কাঁকড়া

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণকারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আধুনিক পদ্বতি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে প্রতি বছর এ খাত থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়ছে।

আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত কাঁকড়া আহরণ মওসুম সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার সহস্রাধিক জেলে বন বিভগ থেকে নির্দিষ্ট ivR‡¯^i বিনিময়ে পারমিট সংগ্রহ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। গহীন সুন্দরবনসহ সাগর মোহনা থেকে জেলেরা কাঁকড়া আহরণ করে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার দেড় লক্ষাধিক হেক্টর চিংড়ি ঘেরে প্রাকৃতিকভাবেই কাঁকড়া উৎপন্ন হয়।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১১ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাইলা, হাব্বা, সিলা ও সেটরা কাঁকড়ার প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় চীন, মিয়ানমার, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ৬ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। এরপর প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবার বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। ১৯৯০-৯১ সালে কাঁকড়া রপ্তানি করে আয় হয় ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কয়েকগুন বেড়ে যায়। ওই অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১২৫ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি করা হয় ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার টাকার। ২০০১-০২ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৫৩০ কোটি টাকা। ২০০২-০৩ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলারের ৬৩০ মেট্রিক টন।

২০০৩-০৪ অর্থবছরে এ খাতে আয় গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন টাকায়। কাঁকড়া চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর ও নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিকভাবে রেণু থেকে বড় হয়। এ অঞ্চলে ১২ মাস কাঁকড়ার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকায় এখন অনেক কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে।

সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে যে কাঁকড়া ধরা পড়ে তা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি, কাঁকড়া চাষিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে ব্যাংকঋণের সুবিধা দেয়া হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাঁকড়া রপ্তানি দেশের সমৃদ্ধির দুয়ার উন্মোচন করতে পারবে। [ চলবে...]




তথ্যসূত্র : ১. বিবিসি নিউজ ২. আরটিএনএন ৩.দৈনিক ভোরের কাগজ ৪. দৈনিক যায়যায়দিন

Thursday, March 18, 2010

আত্বজীবনী পর্ব-০১

আত্বজীবনী পর্ব-০১

ফেলে আসা স্মৃতি


শুভ্র সকাল। প্রচণ্ড শীত। কুয়াশায় চারদিক ঢাকা। দুই পায়ের সরু রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে সবুজ ধানতে। এমন সময় প্রতিদিন ঐ রাস্তায় প্রাইভেট পড়তে যেতাম আর ভাবতাম এভাবেই যদি কেটে যেতো সারাটা জীবন। রাতে স্বপ্ন দেখতাম কবে বড় হবো?? আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠলাম। প্রাইমারীর গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল। সে সময় আরো বেশী স্বপ্ন ডানা মেলতো মনের ভেতর। স্কুলের ফার্স্টবয় ছিলাম। কোনদিনও কাশ মিস দিতাম না। রহমান স্যার
ইংরেজী গ্রামার পড়াতেন। লম্বা , ফর্সা ও স্মার্ট। পান খেতেন আর মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেন। কাশে পড়া না পারলেই রীতিমত কান ধরে দাঁড় করিয়ে বলতেন বড় বড় জ্ঞানী ব্যাক্তিদের কথা। বিভিন্ন মনীষির ইতিহাস। শুনাতেন ভালো করে লেখাপড়া করলে জীবনটা সুন্দর হয়। সফল হয়। আর স্বপ্ন দেখাতেন ম্যাজিস্ট্র্যাট, ইঞ্জিনিয়ার হবার।

এরই মধ্যেই সায়েন্স থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হলাম। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে এইচএসসি আর পাশ করা হলোনা। নিলাম একটা কিণ্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি। হাসি-খুশি, ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের সাথে সময় কাটানো, ভালোই চলছিল জীবন।

একদিন এই স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে পরামর্শ দিল। বলল, তুমি আবার নতুন করে পড়ালেখা শুরু কর। জীবনটাকে এভাবে রেখো না। স্যারের কথা অনুযায়ী কয়েকমাস পরেই ঢাকায় একটা বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট-এ চার বছর মেয়াদী কম্পিউটার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হলাম।

প্রথম সেমিস্টার ভালো রেজাল্ট করলাম। দ্বিতীয় সেমিস্টারেই আবার ঘটে গেল মহাবিপদ। মিডটার্ম পরীার মাত্র দশ-বারো দিন পূর্বে ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের সামনে বাস দূর্ঘটনায় আমার ডানহাত ভেঙ্গে গেল। তারপর???
তারপরতো ঘটে গেল আরও রহস্যময় মজার ঘটনা।
পলিটেকনিকের অধ্য স্যার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল ওয়াদুদ আমাকে প্রচণ্ড আদর করতো। প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট ভালো হবার কারণে অন্যান্য স্যার ম্যাডাম সবাই আমাকে মিডটার্ম পরীা দেবার অনুমতি দিল।
কিন্তু একটা শর্ত জুড়ে। ইন্সটিটিউটের অফিস কে বসে পরীা দিলাম। আমি মুখে মুখে বলি আর আমার ফুফাতো ভাই মাহফুজ আমার কথা শুনে শুনে খাতায় উত্তর লিখে। এভাবেই দ্বিতীয় সেমিস্টার পার করলাম।

সাইফ বরকতুল্লাহ : ডায়েরির পাতা থেকে সংকলিত

Monday, March 1, 2010

জ্যোৎস্না রাতের গল্প


অমর একুশে বইমেলায়
সাংবাদিক সাইফ বরকতুল্লাহর
কাব্যগ্রন্থ জ্যোৎস্না রাতের গল্প


অমর একুশে বইমেলা ২০১০-এ প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক সাইফ বরকতুল্লাহর প্রথম কাব্য গ্রন্থ জ্যোৎস্না রাতের গল্প। ৩৯ টি কবিতার সংকলনে বইটি রচিত। সাইফ দীর্ঘদিন লেখালেখির সাথে জড়িত থাকলেও এটাই তার প্রথম বই। শুধু চর্চার মাধ্যমে যারা কবি হন, সাইফ বরকতুল্ল¬াহ যে তেমন কবি নন, সে কথা তার ‘জ্যোৎস্না রাতের গল্প’ বইটির কবিতাই প্রমাণ করে। কবিতাগুলো তার ¯^Zù~Z© ভাব থেকে জন্ম নেয়া। কবিতার কাছে পাঠকের যে দাবি, তা হলো, ভালোলাগা। সাইফ বরকতুল¬াহ’র কবিতায় তার সবটুকু আছে। অতএব সাইফের কবিতা সুখপাঠ্যও। তারও চেয়ে বড় কথা, ‘ জ্যোৎস্না রাতের গল্প’ বইটির কবিতা সময়কে কবচের মতো ধারণ করে আছে। এই কবিতাগুলোর ভেতর দিয়ে বিকীর্ণ হচ্ছে প্রেম বিরহের রেশ, গলাবাজির রাজনীতির প্রতি কটাক্ষ এবং শূন্যতায় নিমগ্ন, বা নিঃসঙ্গতায় বিরাজমান একটি সত্ত্বার বহুরকম ব্যঞ্জনা। সাইফ বরকতুল্লাহ’র জন্ম ১৯৮৩ সালের ৩১ আক্টোবর জামালপুর জেলার তেঘরিয়া গ্রামে। মা বুলবুলি বেগম। বাবা আব্দুল মোমিন। সাইফ বরকতুল্লাহ কম্পিউটার প্রকৌশলী হয়েও তার নেশা যেমন কবিতা লেখা, তেমনি পেশা কলমবাজি। বর্তমানে একটি মাসিক পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক তিনি। বইটি প্রকাশ করেছেন চয়ন প্রকাশন। মূল্য ৭০ টাকা।

Thursday, February 11, 2010

ধ্যাত, আসলেই পাগল আমি


ধ্যাত, আসলেই পাগল আমি




ধ্যাত, আসলেই পাগল আমি
সবাই বলে , তুই একটা পাগল
আমি জানি আমার অবস্থা।

চারদিক শুধু হাহাকার
চাই শুধু চাই এটা ওটা
চাই শুধু টাকা, গাড়ী, বাড়ি
চাই শুধু অট্রালিকার সুখ
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে??
চারপাশ, দশদিক।

ধ্যাত, আমরা যারা পাগল
আমরা যারা ঐ সবের ধারে কাছেও
যেতে চাইনা
আমরা যারা নগন্য হয়ে থাকি
খাই দাই ঘুরি ফিরি
এটাই আমাদের পাগলের উপাদান।

আবহমান এই পাগলের পথচলা
নিষ্ঠুর এই ভাঙ্গা সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে
শুধু একটা কথাই বলি
ধ্যাত, আসলেই পাগল আমি।

Sunday, February 7, 2010

বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ দুবাই


বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ দুবাই

দুবাই সমপ্রতি উদ্বোধন করেছে বিশ্বেও সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ দুবাই। ২০০ তলা বিশিষ্ট এ টাওয়ারের উচ্চতা ৮০০মিটার। সব রেকর্ড ছাড়িয়ে আত্বপ্রকাশ করার মধ্য দিয়ে দুবাই শহরের মর্যাদা বাড়িয়ে দিল বুর্জ দুবাইয়ের নির্মাতা ইমার প্রোপার্টিস পিজেএসসি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে ২০০৪ সাল থেকে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করে। তবে ভবনটির সঠিক উচ্চতা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। বুর্জ দুবাইয়ের ২০০ তলার মধ্যে ১৬৫টি বাসযোগ্য বলে জানিয়েছেন এর চেয়ারম্যান। ২০০৪ সালে নির্মাণকাজ শুরুও ১,৩২৫ দিন পর ভবনটির উদ্বোধন করা হল। টাওয়ারটির কাঠামোর ৩৩০,০০০ কিউবিক মিটার কংক্রীট, ৩৯,০০০ মিটার স্টিল, ১০৩,০০০ স্কয়ার মিটার কাঁচ এবং ১৫,৫০০০ স্কয়ার মিটার স্টেইনলেস স্টীলের তৈরি। ওজন ৫০০,০০০টন। মোট আয়তন ৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন স্কয়ার ফিট। এর মধ্যে আবাসিক এলাকা ১ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন স্কয়ার ফিট। আর ৩০০,০০০ স্কয়ার ফিট অফিস এলাকা। এছাড়াও এত আছে সুইমিং পুল, পর্যবেক্ষণ ডেক, রেস্টুরেন্ট এবং বিলাসবহুল হোটেলও।

Saturday, February 6, 2010

কোপেনহেগেন সম্মেলন:


কোপেনহেগেন সম্মেলন:
জলবায়ুর বিষম রাজনীতি
এবং বাংলাদেশ

সাইফ বরকতুল্লাহ


১৯ ডিসেম্বর ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে শেষ হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। 15th Conference of the Parties অর্থাত্‍ কপ নামে পরিচিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয় গত ৭ ডিসেম্বর। ১৯২ টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দেন। অনেক আগ্রহ নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ এর দিকে লক্ষ্য রাখছিল। কারণ এই সম্মেলনের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছিল ভূ-পৃষ্ঠের মানুষের আগামী প্রজন্মের জীবন। যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের জলমাত্রার কাছাকাছি অনেক ছোট ছোট দেশ হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, সবুজ শ্যামল শষ্যক্ষেত ভরা জমি বাড়তি সাগরের লোনাজলে তলিয়ে যাবে।

সম্মেলন শেষে একটি চুক্তি হয়েছে, কিন্তু সে চুক্তি কি কোন আশার বাণী শোনাতে পেরেছে?? আসলে এই সম্মেলনে যা হয়েছে তা হলো বাগাড়ম্বরতা, যা চুক্তির ভাষাতেই স্পষ্ট। যাতে আছে এমন সব প্রতিশ্রুতি, যা পালিত হওয়ার কোনোই নিশ্চয়তা নেই। বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে এবং বিশ্ববাসীর আশা-আকাঙ্খাকে অন্ধকারে রেখে নানা অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘটে যাওয়া ১২ দিনের এ সম্মেলন সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পূর্ণাঙ্গ ও সর্বসম্মত রুপরেখা দিতে পারেনি। বরং বলা যায় ১৯২ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ এ সম্মেলন শেষ হলো অনেক নতুন অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়ে।


বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নাগরিকরা নিজেদের ভোগের জন্য অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে ( কার্বন নিঃসরণ ) ভূ-পৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে থাকে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে মেরু অঞ্চল ও পর্বতচূড়াগুলোর বরফ গলে ক্রমে সংকুচিত হতে শুরু করে এবং গলিত পানি সমুদ্রে জমা হয়ে গড় জলের উচ্চতা বেড়ে যেতে শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় সমুদ্রতটবর্তী দেশগুলো এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কাছাকাছি দ্বীপগুলো অচিরেই বর্ধিত সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ডুবে যাওয়ার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০সাল নাগাদ বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জমি সাগরে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী এলাকার ১.৫ কোটি মানুষ জলবায়ুজনিত কারণে উদ্বাস্তু হয়ে যাবে।

কোপেনহেগেন সম্মেলন কোনো বিচ্ছিন্ন মহাসম্মেলন নয়। ২০০৭ সালে বালিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর থেকেই পৃথিবীর ভবিষ্যত্‍ নির্ধারণে কোপেনহেগেনে রাষ্ট্রগুলো কী আইনি ও বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত নেবে তা নির্ধারণ ঘটেছে বেশকিছু সম্মেলন। জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্বজনমত বারবারই ক্ষতিরোধ বা প্রশমনের দাবি জানিয়েছে। দাবি উঠেছে ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে উন্নত বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাক-শিল্পায়নের সময় থেকে ২১০০ সাল নাগাদ ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। অন্যথায় উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা আর ডুবিয়ে দেবে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোসহ বাংলাদেশের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অপেক্ষাকৃত নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ।

সরকার বদলের ফলস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মানমাত্রা নির্ধারণকারী আইনি দলিল কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর না করলেও কোপেনহেগেন দলিলের মূল উদ্যোক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই । দক্ষিণ আফ্রিকাসহ দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ ভারত, চীন ও ব্রাজিলকে সঙ্গে নিয়ে এ দলিল তারা প্রস্তাব করে সম্মেলন শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে। ১৮৯ টি দেশ কর্তৃক সমর্থিত এ রাজনৈতিক সমঝোতা দলিল সব রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সমর্থন না পাওয়ায় এটি জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহিত কোনো দলিল নয়। এটির প্রস্তাবনা জাতিসংঘের রীতিনীতির বিরুদ্ধে বলে এটিকে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে কু্য হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন বিরোধিতাকারী এক রাষ্ট্র । বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে এ প্রস্তাবিত দলিলের পক্ষে মতামত প্রকাশের কিছু চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুব সতর্কভাবে দলিলটি পড়লে ও বিদ্যামান বিশ্ব পরিস্থিতির বাস্তবতার বিশ্লেষণ করলে এ জাতীয় ইতিবাচক প্রচেষ্টার পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

জলবায়ু পরিবর্তন তথা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিবর্তে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ঋণ দিতে চায়। এ জন্য কোপেনহেগেন সম্মেলনে যে চুক্তি হলো তাতে ২০১০-১২ সাল নাগাদ ৩০বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সাল নাগাদ ১০০বিলিয়ন ডলার অর্থের জোগান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সইয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আগামী দীর্ঘমেয়াদী সময়ের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে সে ব্যাপারে একমত হয়ে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো শেষ করবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রায় সমুদ্রজলের মাত্রা বাড়ার যে প্রবণতা তা কোনোক্রমেই ঠেকানো যাবেনা বিশ্বের তথাকথিত উন্নত ও শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অপকর্মের জন্য বাংলাদেশের মতো দুর্বল দেশগুলোর জনগণকে সাহায্যের নামে ধোঁকা দিয়ে আটক রাখতে চায়।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কিছু আলামত আমরা ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় আইলায় দেখতে পেয়েছি। এখনও খুলনা, সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জায়গাজমি সাগরের লোনা পানির তলায় হারিয়ে বাঁধে বা রাস্তায় অনাহারে দিনানিপাত করছে। তাদের অনেকেই জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে শহরাঞ্চলে ভিক্ষা করছে। এখন শিল্পোন্নত দেশগুলো সাহায্যের নামে তাদের উপকূল এলাকায় আটকে রেখে উদ্বাস্তু বস্তি তৈরি করতে চায়। এ ধরণের সমাধান আসলে কোন কাজেই আসবে না।

উল্লেখ্য যে, এ দলিল বিশ্ব তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব স্বীকার করলেও এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট অঙ্গীকার না করে কেবল সাম্য ও টেকসই উন্নয়নের প্রেক্ষিতে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার তাগিদ দিয়েছে (অনুচ্ছেদ-১)। এ দলিল কবে থেকে নিঃসরণের চূড়ান্ত মাত্রা ক্রমান্বয়ে নামিয়ে আনতে হবে তাও উল্লেখ করেনি ( অনুচ্ছেদ-৩)। যদিও উন্নত বিশের দেশগুলোকে তাদের প্রস্তাবিত নিঃসরণ হ্রাসের মাত্রা ৩১ জানুয়ারি,২০১০ নাগাদ জাতিসংঘ সচিবালয়ে জানাতে আহ্বান করা হয়েছে। তবে সে হ্রাসের নূ্যনতম মাত্রা কী হবে তার কোনো উল্লেখ করা হয়নি। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া ২০১০ সাল নাগাদ নিঃসরণ হ্রাসের যে মাত্রা প্রস্তাব করেছে, আইপিসিসির প্রস্তাবনার তুলনায় তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। ১৯৯৭ সালের কিয়োটা প্রটোকলের অধীনে নিঃসরণ হ্রাসের মাত্রা নির্ধারণ করেও তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে উন্নত দেশগুলো। আইপিসিসির পুনঃতাগিদ সত্বেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও তা পালনে অঙ্গীকারের ব্যর্থতা জলবায়ুর পরিবর্তনের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। ৪২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র ছাড়াও অস্তিত্ব হারাবে বাংলাদেশ-এর এক পঞ্চমাংশ উপকূলীয় ভূখণ্ড যেখানে বসবাস অন্তত কোটি বাংলাদেশির। বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব নিয়ে দরিদ্র দেশগুলোর দাবি-দাওয়ার প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী ধনী দেশগুলোর উদাসীনতা ও ভ্রূক্ষেপহীন আচরণই এর মূল কারণ।

কোপেনহেগেনের বিতর্কিত সমঝোতা দলিলে বাংলাদেশ সম্মতি প্রদান করে যে 'রাজনৈতিক ইচ্ছা'র পক্ষে বাংলাদেশ অবস্থান নিয়েছে তা বিপর্যয় রোধের ইচ্ছা নয়। 'অভিযোজন তহবিল' পুনর্বাসনে কিছুটা সহায়তা করবে মাত্র, কিন্তু উন্নত বিশ্ব নিঃসরণ প্রয়োজনীয় মাত্রায় কমালে হারিয়ে যাবে উপকূলীয় জেলা-পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা ও খুলনা। বিপন্ন হবে সুন্দরবন ও কক্সবাজার। বদলে যাবে দেশের ও বিশ্বের মানচিত্র। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে কিশ্ব রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জাতিসংঘ। আর তা হবে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও সভ্যতার চরম অবমাননা।

ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে গত ১২ দিনের জলবায়ু সম্মেলন শেষে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা সব মহলকে খুশি করতে না পারলেও জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত এই চুক্তি নিয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ধরণীকে বাঁচানোর সংগ্রামের 'শুরু' হচ্ছে কোপেনহেগেন সম্মেলন। সব মহল মানতে বাধ্য হয় এমন একটি শক্তিশালী চুক্তি করার প্রয়োজন বলে জাতিসংঘ বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।

এদিকে, যে জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে সম্মতি দিয়েছে জার্মানী ও ইন্দোনেশিয়া। উভয় দেশ বলেছে, কিছু বিতর্ক থাকলেও এই চুক্তি একটি ভাল 'শুরু' হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃপ্রশাসনিক প্যানেলের চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র পাচুরি বলেছেন, 'কোপেনহেগেন জলাবায়ু চুক্তির কথাগুলোই চূড়ান্ত বাণী নয়। সামনে আরো কিছু অর্জন করার আছে। কোপেনহেগেন চুক্তি বাধ্যতামূলক কোনো দলিল নয়। তাই কেউই এটি মানতে বাধ্য নয়। মোটকথা কেউ যদি স্বেচ্ছায় মানেন তো ভাল, না মানলে কিছু করার নেই।' কিন্তু এমন একটি চুক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচানো যাবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। কোপেনহেগেন চুক্তিকে একটি ভিত্তি ধরে সামনে আগানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতিবিধি যেদিকে অগ্রসর হচ্ছে তাতে স্বেচ্ছা সেবা দিয়ে কাজ হবে না। বাধ্যতামূলক চুক্তি লাগবে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত আমাদের অনেক কাজ করার আছে। আগামী বছর ডিসেম্বরে মেক্সিকোতে পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, কোপেনহেগেন চুক্তির মূল দিক ছিল তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখা এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন তহবিল গঠন করা।

কাপেনহেগেন অঙ্গীকারনামার খসড়া প্রণয়নকারী ২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও ছিল এবং বাংলাদেশের কিছু প্রস্তাব এতে ঠাই পেয়েছে। ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, কিউবা এবং নিকারাগুয়াসহ কয়েকটি দেশ এই চুক্তির নিন্দা জানিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।

কোপেনহেগেন অঙ্গীকারনামায় বিশ্ববাসীর প্রত্যাশার পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলেও, যেটুকু অর্জন হল তা বাস্তবায়িত করাই এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আইনগত বাধ্যবাধ্যকতায় এ চুক্তি কার্যকর করতে না পারলে তা একটি ব্যর্থ দলিল হিসাবে চিহ্নিত হবে। কাজেই চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়াও কোপেনহেগেন অঙ্গীকারনামাকে ভিত্তি করে আগামী দিনগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি যাতে এ সংক্রান্ত গঠিত বিশ্ব তহবিল হতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সক্ষম হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়।

Saturday, January 16, 2010

Review



The review in daily Nayadiganta 15.01.2010 published

Tuesday, January 5, 2010

২০১০ এর প্রথম দিন

২০১০ এর প্রথম দিন


নববর্ষের প্রথম দিনটা ছিল শুক্রবার। ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম পত্রিকার স্টলে। সবগুলো দৈনিকের প্রথম পাতা চোখ বুলিয়ে কিনলাম মাত্র দুটো দৈনিক। দৈনিক সমকাল ও দৈনিক নয়াদিগন্ত। এরপর বাসাতে পত্রিকা, আরো কিছু পুরোনো পেপারস স্টাডি করতে থাকলাম। বেলা বারোটায় আমার রুমমেট ফয়সাল আর আমি মোটর সাইকেলে [ ফয়সালের অফিস থেকে প্রাপ্ত গাড়ী ] চলে গেলাম ধানমন্ডির সোবহান বাগে মসজিদে জুমআর নামাজ পড়তে। অবশ্য আমরা প্রায়ই মিরপুর থেকে ঐ মসজিদে জুমআর নামাজ পড়তে যাই। এরপর আবার বাসায় ফিরে আসি।

দুপুরে খিচুরী দিয়ে খাবার সেরে ঘুমিয়ে পড়ি। দীর্ঘ দুই মাসের মধ্যে এই প্রথম দুপুরে ঘুমালাম। সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজ পড়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার বন্ধু লন্ডন প্রবাসী শিবলী এক মাসের ছুটিতে ঢাকায় এসেছে বিয়েসহ আরো কিছু পারিবারিক কাজ করতে। তো সেদিন উত্তরার সিসেল পার্টি হাউসে রাত আটটায় ওর বিয়ে। আবার প্রচণ্ড শীতও সেই সময় ঢাকার জীবনে জেঁকে বসেছে। তো প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকা সত্বেও মনটাকে বিয়েতে নিয়ে যেতে পারলাম না। ফলে শিবলী ভাই, ও ওর আম্মু আমার উপর অভিমান করে আছে। যাই হোক এভাবেই সকাল সন্ধ্যা কেটে গেল।

রাতে টিভিতে কিছুক্ষণ সংবাদ দেখে আবার চলে এলাম বিছানায়। গত বছরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ভাবতে ছিলাম। হঠাৎ মনে পড়ে গেল বন্ধু মানিকের [ মানিক-একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সিনিয়র সাংবাদিক ] কথা। টেবিল থেকে সেল ফোনটা নিয়ে ওর সাথে কথা হলো নানা বিষয়ে। নতুন বছরে ও কী ভাবছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ও আমাকে বলল, নতুন বছরে আমার একটাই পরিকল্পনা, গান নিয়ে কাজ করা। আমি বললাম, আমি এ বছরটাতে উপন্যাস নিয়ে কাজ করবো। আরো নানা বিষয়ে কথা হয়। অবশ্য তখন রাত কিছুটা ভারী হয়ে গেছে। এশার নামাজ, রাতের খাবার সেরে ঘুমতে গেলাম পরের দিন অফিসে যাবার অপেক্ষায়।

২০১০.০১.০১ রাত, মীরপুর, ঢাকা।