Pages

Saturday, July 2, 2011

আমার জীবনে প্রথম সিনেমা দেখা

সময়টা নব্বই দশক। তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি। আমাদের সাথে আমাদের এলাকার সব প্রভাবশালী ঘরের সন্তানরা একসাথে পড়তাম। স্কুলেও আমাদের ব্যাচটা দাপট নিয়ে চলতাম। খেলাধুলা, পড়ালেখা, রাজনীতি সব বিষয়েই আমাদের ব্যাচটা অন্যরকম ছিল।

তখনও আমাদের এলাকায় সিনেমা হল ছিলনা। বাজারে ভিসিআরে ছবি দেখতো সবাই। লাইলী-মজনু, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না, কেয়ামত থেকে কেয়ামত-এই ছবিগুলো জনপ্রিয় ছিল সেই সময়। এছাড়া সালমান শাহ-এর প্রায় সব ছবি ( স্বপ্নের পৃথিবী, দেনমোহর, অন্তরে অন্তরে, স্বপ্নের মৃত্যু নেই ) জনপ্রিয় ছিল।

আমি ছবি দেখতাম না। সেভেনে যখন পড়ি, তখন আমার সহপাঠিরা সবাই ধরল, সিনেমা দেখতে হবে। আমি ক্লাশ ক্যাপ্টেন সাথে ক্লাশের ফার্স্টবয়, আবার আমার জেঠা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। বাধ্য হয়েই দেখতে হলো সিনেমা।

আমাদের থানায় তখন নতুন একটা সিনেমা হল হয়েছে। বালিজুরি বাজারে অবস্থিত। নাম স্বজন সিনেমা হল। সেই সময় অবশ্য একটা ছবিও মুক্তি পেয়েছিল। স্বজন সিমেনার নাম। ইলিয়াস কাঞ্চন নায়ক আর মৌসুমি নায়িকা। আরেকজন নায়ক ছিল। নাম মনে নেই।

ক্লাশ শেষ করে দুপুরের পর আমরা একসাথে প্রায় বিশজন বাই সাইকেলে চলে গেলাম বালিজুরি বাজারে। আমাদের স্কুল থেকে সিনেমা হল তিন মাইল দূরে ছিল। তখন রাস্তারও পাকাকরনের কাজ চলছিল।

নতুন এক অভিজ্ঞতা । এই প্রথম পড়ালেখা, বাড়ি ছাড়া বাইরে যাচ্ছি। আমরা যথা সময়ে পৌঁছে গেলাম। নতুন সিনেমা হল স্বজন। সেই সাথে নতুন সিনেমাও নাম স্বজন। সিনেমার নামের সাথে হলের নামের কী সুন্দর মিল। আর আমার জীবনের প্রথম ছবি দেখা।

ছবিটাও দেখে খারাপ লাগেনি। গানগুলো সুন্দর ছিল। অশ্লীলতাও ছিলনা। মোটামুটি ভাল বলা চলে। এনিওয়ে সিনেমা শেষ করে যখন ফিরছিলাম। তখন রাস্তার কিছু দূর এসে ঘটে গেল আরেক মজার কাণ্ড। বলছিলাম  রাস্তা পাকাকরনের কাজ চলছিল।

আমরা বাইসাইকেলে আসতেছিলাম। হঠাৎ আমাদের সহপাঠি আসাদ সাইকেল উল্টে নিচে পড়ে যায়। যদিও ব্যাথা পায়নি তবুও পোলাপানের মজা নিতে সময় লাগেনি।

শেষে স্বজন সিনেমা হলে স্বজন ছবির মাধ্যমে অভিষেক হয়েছিল সেদিন সিনেমা জগতে প্রবেশ করার। যদিও এখন আর ছবি দেখা হয়না। তবুও মাঝে মাঝে ভাল হিন্তি বা ইংলিশ মুভি দেখতে ভুলিনা।

Monday, June 20, 2011

বয়স ২৫ এবং-01

অফিস থেকে বের হয়ে গ্যালারির দরজা পেরিয়ে সামনে যেতেই কানে আসল--- 
শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে / তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ? / গঙ্গারামকে পাত্র পেলে / জানতে চাও সে কেমন ছেলে ? / মন্দ নয় সে পাত্র ভাল / রং যদি চাও বেজায় কালো
 / তার উপরে মুখের গঠন / অনেকটাই ঠিক পেঁচার মতন / বিদ্যে বুদ্ধি বলছি মশাই / ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় ! / উনিশটিবার মেট্রিকে সে / ঘায়েল হয়ে থামলো শেষে......। 


রোজারিওর ভাবনার সাথে মিশে আছে সুকুমার রায়ের সৎপাত্র কবিতার এ লাইনগুলো। রোজারিও সামনে যাচ্ছে। মনটা আজ ফুরফুরে। হঠাৎ পেছন থেকে শিমুলের ডাক। রোজারিও.. রোজারিও...। 

রোজারিও পেছন ফিরে তাকাতেই শিমুলের প্রশ্ন-আচ্ছা, তোমার সাথে আমার বিয়ে ভেঙে গেছে। বিয়ে হলে কী হতো ? রোজারিও দাঁড়িয়ে গেল। চোখে মুখে রাগ আর শরীরটা কাঁপছে। পারলে এক্ষুণি শিমুলের দুই গালে চড় বসিয়ে দিতো। শিমুল আবার বলল, বিয়ে হলে কী হতো ? বলেই চলে গেল শিমুল। 

শিমুলের এ ধাক্কাটা আজও ভুলতে পারছেনা রোজারিও। বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে। 

রোজারিও এখন আমেরিকায় নাসাতে পার্ট টাইম চাকুরি করছে। আমেরিকায় সে স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য এসেছে। বয়স যখন চার, তখনি ওর বাবা, মা ওকে নিয়ে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। এদেশেই শৈশব থেকে কৈশোর-এ পরিণত হয়। নিজের ইচ্ছায় আসেনি। তাকে আনা হয়েছে। 

যেদিন জন্মভূমি ছেড়ে আসতেছিল, সে দিন হতেই রোজারিও মন খারাপ করতে শিখেছে। ঢাকা ছেড়ে বিমান যখন আকাশে উড়ছিল, তখনই মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি ? 

ঘুমপাড়ানি মায়ের গান শুনিয়ে সেদিন রোজারিওকে ভুলিয়ে দিয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর। অথচ রোজারিওর চোখে গ্রামের উঠোনে পুতুল খেলার দৃশ্য তাড়া করে বেড়ায়। পুকুর ধারে বাঁশের বেঞ্চে বসে মাছ দেখার ছবি এখনো খুঁজে বেড়ায় মনে। 

চলবে...

Wednesday, June 15, 2011

আমার মন খারাপ

আমার মন খারাপ। ভীষণ মন খারপ। 

[ ক. ] 
মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে 
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। 
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা, চড়ে 
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে, 
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে 
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে। 
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে 
রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে। 

গত কয়েকদিন হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বীরপুরুষ কবিতাটি ঘুমানোর সময় বার বার মনে পড়ছে। অবশ্য আমার মনে পড়ার কারণও আছে। 

[ খ. ] 
গত কয়েক বছর পূর্বে আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। ইদানীং অফিস থেকে বাসায় যখন ফিরি তখন দেখি আমার রুমমেট ফয়সাল দিব্যি ওর মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে। প্রায় নিয়মিতই আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা, কথা বলে। এই কথা সেই কথা নানা কথা। মাংস তরকারী রান্নার সময় বলে, মরিচ কতটুকু দিব ? পায়েস কীভাবে রান্না করবো ? ইত্যাদি ইত্যাদি...। 

[ গ. ] 
ইদানীং ব্যাপারটা আমায় চরম পেইন দিচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে যখন বাসায় ফিরি তখন এরকম ঘটনা। কোন কিছু ভাল লাগছেনা ইদানীং। এইতো সেদিন এসবির এক বিখ্যাত ব্লগার আমার অসুস্থতার কথা শুনে মেইলে জানতে চেয়েছে, কেন আমি বারবার অসুস্থ হচ্ছি ? আসলে কী আর বলবো ! বলার কিছু খুঁজে পাইনা। 

[ ঘ. ] 
এক সময় প্রচুর লিখতাম। ল্যাপটপ নিয়ে কিংবা কলম আর ডায়েরী নিয়ে বসলেই লেখা হয়ে যেতো। ইদানীং লিখতেও ইচ্ছে করেনা। লিখতে বসলেই দুনিয়ার ঘুম চোখে এসে হামলা চালায়। গত পাঁচ বৎসরের মধ্যে রাত দুইটার আগে ঘুমানোর কথা ভাবতেই পারিনী। আর এখন মেজাজটাই বিগড়ে যায়। 

[ ঙ, ] 
নিত্যদিন সকালে অফিসে যাবার সময় আরেক যন্ত্রণা এখন শুরু হয়েছে। বাসে উঠলেই অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ে গন্ডোগোল। পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সিটিং বাসে উঠলেও শান্তি পাইনা। যাত্রীদের সাথে হেলপারদের বাকবিতন্ডতা নিত্যদিনের সঙ্গী। 

[ চ. ] 
কী আর করা। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর নন্দলাল-- কবিতার দুটো লাইন দিয়ে শেষ করছি.... 
তাই শুয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়া রহিল নন্দলাল.... 
সকলে বলিল--ভালো রে নন্দ, বেঁচে থাক চিরকাল...।

Thursday, June 2, 2011

সমুদ্রের কাছে চিঠি

প্রিয় সমুদ্র ,
কেমন আছো? কোথায় আছো ? শরীর মন হৃদয় ভালো? দেখা হয়না, কথা হয়না, চায়ের আড্ডা হয়না। সমুদ্র, তুমি এতটা নিষ্ঠুর আজ কী করে হলে ? সুত্যি-ই তুমি বড্ড নিষ্ঠুর...।

কিছুক্ষণ আগে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠেছি । জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি বাইরে বৃষ্টির ধারা শেষ হলো । মনে হলো যেন আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। গেলো গ্রীষ্মকালে কী মধুর কন্ঠে তুমি আমার জন্য গান গেয়েছিলে। সে কথা আমার মনে দোলা দিয়ে গেলো। হাতে হাত রেখে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে আমরা আমাদের কথাগুলো ভাবি ভাবছি। দূরের তারারা যদি আমাদের কথা শুনতে পায় ।

মনে আছে, সেই দিনগুলোর কথা। ফুল ফোটার ঋতু পর্যন্ত তুমি নিজেই একাকী বোধ করছিলে। যে অশত্থ আমাদের কথা শুনতো, সেটি এখনো জ্যোত্স্নার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসের সঙ্গে বয়ে যাওয়া সেই প্রতিশ্রুতির কথাগুলো মনের গভীর কোণে লুকিয়ে আছে। আমি অস্তগামী সূর্যে পরিণত হতে চাই, যাতে তোমার একজন হিসেবে সব জায়গায় তোমার সঙ্গে যাবো, তোমাকে অপরিবর্তিত উষ্ণতা দেবো। আমি ছায়া হতে চাই, যাতে তোমার সমুদ্র হিসেবে সব জায়গায় তোমাকে সবচেয়ে নিবিড় প্রতিরক্ষা দিতে পারি।

হঠাৎ করেই আজ এ কথাগুলো ভাবা। কারণ ? কারণ একটাই তোমাকে মনে করা। তুমি-ই তো সেদিন বলেছিলে, রুপালি রাতে তারার মেলায় তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে গভীর সমুদ্রের গাঙচিলের মতো ভেসে বেড়াতে।

প্রিয় সমুদ্র,
আজ রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে আকাশ দেখছিলাম। আকাশ দেখতে দেখতে সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই চিঠির কথাটা মনে পড়ে গেল। আজ তোমাকে মনে করে সুকান্তের সেই চিঠিটা বারবার গুন গুন করে বলতে ছিলাম............
.....................সত্যি অরুণ, বড় ভাল লেগেছিল পৃথিবীর স্নেহ, আমার ছোট্ট পৃথিবীর করুণা। বাঁচতে ইচ্ছে করে, কিন্তু নিশ্চিত জানি, কলকাতার মৃত্যুর সঙ্গেই আমি নিশ্চিহ্ন হব। মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে--কিন্তু মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে , প্রতিদিন সে সভ্যতার সঙ্গে....।
আবার পৃথিবীতে বসন্ত আজ আসবে, গাছে ফুল ফুটবে। শুধু তখন থাকবনা আমি, থাকবেনা আমার ক্ষণিকের পরিচয়। তবু তো জীবন দিয়ে এক নতুনকে সার্থক করে গেলাম।........

Tuesday, May 17, 2011

না ভাঙলে পাথর জ্বলে না

এক. 
বুকের কাঁটাগুলো তুলে নিলে 
সারতো যদি ক্ষত, 
কাঁটা দিয়ে-ই বুকখানা তার 
সাজাতাম অবিরত। 

দুই. 
উস্কে দিতাম সব স্মৃতি-ই 
দপদপিয়ে আগুন যদি জ্বলতো। 
সোনার চালে রাঁধা ভাতে কী যে ধাঁ ধাঁ, 
সেই জানে, যে জন ক্ষুধায় আসক্ত। 


তিন. 
আগুনই শুধু সূত্র পুড়িয়ে খায় 
অন্য সবাই সূত্র আকড়ে বাঁচে, 
গুল্মলতাও সূত্র জড়িয়ে সমষ্টি হয়; কবি 
ভাবখানা টেনে বোনেন জামদানি ধাঁচে। 

চার. 
আলো আকাশ ছাড়া, বৃষ্টিও মেঘ ছাড়া 
পতনের মুখর উৎস বুনতো কিসের ফাঁদে! 
বিকীর্ণ আভায় সূর্যটা রাতদিন সহস্র কোটি ছায়াপথ 
নিয়ে ঝুলে থাকে শুধু এতোটুকু সামিয়ানার চাঁদে। 

পাঁচ. 
কঠিনকে আলগা, আলগাকে কঠিন ভেবে, 
একইভাবে কতজনও ভুল গেরো খোলে, আর বাঁধে। 

ছয়. 
নকল সিদ্ধাই পুজো নিতে এলে শুদ্ধ মনের, 
ভেজাল খলও এসে আগলেছে কি অর্গল, 
সমঝে রেখেছে সাজির দু'চারটে ফুল? 
ভালোমন্দের দ্বন্দ্ব কেনো? দু'জনই সমান ভুল। 


সাত. 
না ভাঙলে পাথর জ্বলে না জোনাকের মতো বাতি, 
কী সাধ জন্মে, জানে ঝড়ো বাতাসের খোলা ছাতি। 
তাই নিরেট জেনে জীবনের যেটুকু থেকে যায় অক্ষুণ, 
খুব কি প্রয়োজন, ধ্যানীর পাশে একটি প্রদীপ মৌন! 

জীবনে প্রথম মাছ কুটার গল্প এবং তরকারী রান্না

১৯৯৮ সাল। আমি সবেমাত্র এসএসসি পাশ করে ইন্টারমেডিয়েট ভর্তি হয়েছি। গ্রাম থেকে শহরে এসে মেস-এ থাকা শুরু হলো। শুরু হলো একা থাকার দুঃসহ যন্ত্রণা। মা-বাবা ছেড়ে মানুষ হবার জন্য একাকী জীবনের প্রথম ভালো না লাগার যে ঘটনা আজো ভুলতে পারিনি। 

মেস জীবনের চতুর্থ দিনে বুয়া আসেনি। রাতে রান্না করার দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। রুমমেটদের অনেক বুঝিয়েও কোন লাভ হলোনা। বাজার থেকে আনা ছোট মাছ কাটার দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। 
কী আর করার। শুরু করলাম । অর্ধেক মাছ কাটার পর আমার বাম হাতের একটা আঙ্গুল কেটে গেল। আমার মেজাজ তখন চরম গরম। রাগে ক্ষোভে রক্তাক্ত অবস্থায়ই মাছ কুটার কাজ শেষ করলাম। তারপর রুমমেট সুমন আমাকে ডেকে সেভলন দিয়ে হাত ধুয়ে কী একটা মলম জাতীয় লাগিয়ে দিল। রক্ত পড়া বন্ধ হলো।মিনিট পাঁচেক চুপচাপ বসে শুরু করলাম তরকারী রান্না। আলু, বেগুন আর ছিম দিয়ে ছোট মাছ তরকারী রান্না করলাম। 

রাতে খাবার বসে ঘটে আরেক মজার কাণ্ড। খাইতে দেখি তরকারীতে লবণ একদম হয়নি। আসলে আঙ্গুল কাটার যে চরম বেদনা সে কারণেই হয়তো রান্নার সময় তরকারীতে লবণ দেয়নি। তরকারীটাও একটু কাঁচা কাঁচা লাগছে। আসলে নতুন রান্না করছিতো মসল্লা, লবণ, তৈল, হলুদ মরিচ কতটুকু দিতে হয় তা না জানার কারণে তরকারী কাঁচা কাঁচা লাগছে। এভাবেই সেদিন রান্না করেছিলাম আর রাতে খেয়েছিলাম।

কীভাবে গল্প লিখবেন

গল্প । জীবন মানেই গল্প। ছোট বেলায় মায়ের ঘুম পাড়ানী গল্প কিংবা ঠাকুর মার ঝুলি, প্রাইমারী স্কুলের ক্লাশের স্যারদের কত মজার মজার গল্প--মনে আছে তো আপনাদের? কত গল্পইনা শুনেছি, পড়েছি। এখনো আমরা গল্প পড়ি। একটা হৃদয়স্পর্শী গল্প পড়লেই, সবাই মিলে আলোচনা করি সেই গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে। 

আর বিখ্যাত লেখকদের গল্প পড়লেই ইচ্ছে করে নিজেরাও একটা গল্প লিখি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম,শরৎচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী, আল মাহমুদ, মার্ক টোয়েন, সেক্সপিয়ার, ম্যাক্সিম গোর্কী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ, কাজী আনোয়ার হোসেন-এই সব বিখ্যাত লেখকদের গল্প পড়লেই মনে হয় জীবনটাই একটা গল্প। কী সুন্দরভাবে জীবনের সব আয়োজন তুলে ধরেন তাঁরা গল্পে। 

কিন্তু আপনারও তো ইচ্ছে করে গল্প লিখতে তাইনা। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর লেখা যায়না। চলুন এবার দেখি কীভাবে তা করা যায়। 

(এক.) বিষয় নির্বাচন ও শুরু 

(০১) আপনি গল্প লিখতে চান। তাহলে প্রথমেই আপনার লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে। 
(০২) প্রথমেই আপনি গল্পের প্রেক্ষাপট এবং চরিত্র নিয়ে ভাবুন। ভাবুন কোথা থেকে শুরু করবেন এবং কোথায় গিয়ে শেষ করবেন। 
(০৩) যখন গল্প শুরু করবেন, তখন আপনার গল্পের প্রেক্ষাপট ঠিক করুন। ডায়ালগ কী হবে, ক্লইমেক্স কী হবে, এগুলো ঠিক করুন। 
(০৪) প্রয়োজনে নোট করুন। নোটটি সামনে রেখে গভীরভাবে ভাবুন। 
(০৫) একই সময়ে না লিখে প্রতিদিন কিছু অংশ করে লিখুন। 
(০৬) বারবার পড়ুন। 


(দুই.) প্রথম প্যারাগ্রাফ 

মনে রাখবেন শুরুটাই যেন আকর্ষণীয় হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামার নির্বাচনে বিজয়ের গল্পটা নিশ্চয়ই মনে আছে। চেঞ্জ উই নিড---দেখেন তাঁর নির্বাচনে জয়ের গল্পে শুরুটাই বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলে। আপনিও আপনার গল্পের শুরুটা এরকম দিয়ে শুরু করবেন। পাঠককে ধরতে এর বিকল্প নেই। 

(তিন.) চরিত্র 
Your job, as a writer of short fiction–whatever your beliefs–is to put complex personalities on stage and let them strut and fret their brief hour. Perhaps the sound and fury they make will signify something that has more than passing value–that will, in Chekhov's words, "make [man] see what he is like." -Rick Demarnus 

আপনার গল্পের চরিত্র নিয়ে ভাবুন। ইহা গল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই চরিত্র সম্পর্কে জানতে হবে তারপর গল্পে ব্যবহার করতে হবে। নিচের বিষয়গুলো জানলে আপনার গল্পে চরিত্র ব্যবহারে সাহায্য করবে। 
০১) নাম 
০২) বয়স 
০৩) পেশা 
০৪) চেহারা 
০৫) অবস্থান 
০৬) কালার 
০৭) বন্ধু 
০৮) খাদ্য 
০৯) ধর্ম 
১০) বিবাহ/ অবিবাহিত 
১১) শিশু 
১২) ঘুমন্ত 
১৩) মুহূর্ত 
১৪) রোগাটে 
১৫) নার্ভাস টাইপের 

গল্পে এ ধরণের চরিত্র হতে পারে। 


(চার .) পয়েন্ট অব ভিউ ঠিক করুন Choose a Point of View : 
আপনার গল্পের পয়েন্ট অব ভিউ ঠিক করুন। কাকে দিয়ে আপনি গল্পের মেইন অবজেকটিভস তুলে ধরবেন (As a writer, you need to determine who is going to tell the story and how much information is available for the narrator to reveal in the short story)। সেটা হতে পারে ফার্স্ট পারসন, সেকেন্ড পারসন কিংবা থার্ড পারসন। 

(পাচ.) ডায়ালগ 
Make your readers hear the pauses between the sentences. Let them see characters lean forward, fidget with their cuticles, avert their eyes, uncross their legs. -Jerome Stern 

ডায়ালগ গল্পের প্রাণ। আপনার গল্পের বিষয় বস্তুর সাথে চরিত্র অনুযায়ী অর্থবহুল ডায়ালগ লিখুন। সুন্দর একটি ডায়ালগই আপনার গল্পকে বিখ্যাত করতে পারে। হৈমন্তী গল্পের সেই জনপ্রিয় ডায়ালগগুলোর কথা চিন্তা করুন। 

(ছয়.) কনটেকস্ট সেট করুন : Use Setting and Context 
আপনার গল্প লেখার সময় গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে লোকেশন, সময় এবং কনটেকস্ট বা পূর্বসূত্র ঠিক করুন। 

(সাত .) চক্রান্ত সেট করুন- Set Up the Plot : 
A plot is a series of events deliberately arranged so as to reveal their dramatic, thematic, and emotional significance. -Jane Burroway 

প্লট মানে চক্রান্ত। নাটকের গল্পে ঘটনা বা সমাবেশ। একটা গল্পের প্লট নির্বাচন করুন। প্লট নির্বাচনের জন্য আপনি Explosion, Conflict, Exposition, Complication, Transition, Flashback, Climax, Falling Action, Resolution-এগুলোর ব্যবহার করবেন। গল্পে ফুটিয়ে তুলবেন। 

(আট.) দ্বন্দ, যুদ্ধ তৈরি করুন -Create Conflict and Tension 
গল্প জমে যাচ্ছে। ঠিক তখনই গল্পে দ্বন্দ, যুদ্ধ তৈরি করুন। এগুলো গল্পের প্রাণ। আপনার গল্পে সম্ভাব্য দ্বন্দ তৈরি করতে পারেন ----- 
ক) গল্পের নায়ক বা প্রধান অভিনেতার সাথে অন্য কোন ব্যাক্তির। 
খ) গল্পের নায়ক বা প্রধান অভিনেতার সাথে প্রকৃতির বা টেকনোলজির। 
গ) গল্পের নায়ক বা প্রধান অভিনেতার সাথে সমাজের। 
ঘ) গল্পের নায়ক বা প্রধান অভিনেতার সাথে অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রের। 


(নয় .) ক্লাইমেক্স, ক্রাইসিস তৈরি করুন 
গল্পে ক্লাইমেক্স বা ক্রাইসিস না থাকলে মনে হয় সে গল্প কেউ পড়েনা। সুতরাং এটা গল্পের জন্য অনস্বীকার্য। 

( দশ.) সমাপ্তি 
পাঠকের গল্প পড়া শেষ হবে। কিন্তু মনে রাখবে ইস ! এখনই শেষ। হ্যাঁ, প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা, এভাবেই শেষ করবেন গল্পের। 

তাহলে আর দেরি কেন ? শুরু করে দিন গল্প লেখা।

কলকাতার দিদি

গান গাইতে ও ছবি আঁকতে প্রচণ্ড নেশা। কিন্তু পেশা রাজনীতি। আর জীবনটা অতি সাদাসিধে। যে বাড়িতে তিনি থাকেন, এর পাশেই নালা। সুতির শাড়ি আর সাধারণ চপ্পলেই দিব্যি চলেন তিনি। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জি। 

মমতা ব্যানার্জি ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার কালিঘাটের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রোমিলা এবং গায়ত্রী ব্যানার্জীর মেয়ে মমতা ব্যানার্জী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। 
মমতা তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস এর মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালে মমতা রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথম যাদবপুর আসন থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি সিপিএম এর শীর্ষ নেতা সোমনাথ চ্যাটার্জিকে পরাজিত করেন। পরে তিনি অল ইন্ডিয়া যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে গেলেও পরে তিনি দক্ষিণ কলকতা আসন থেকে ১৯৯১ সালে কংগ্রেস সরকার গঠন করলে মন্ত্রী হন মমতা। ১৯৯৬ সালে মমতা অভিযোগ করেন, কংগ্রেস দেশজুড়ে দুর্নীতি শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকারকে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছে। 

১৯৯৭ সালে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) গঠিত সরকারে যোগ দেন। তাঁকে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

২০০১ সালের শুরুতে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মমতা। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পোন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সরকার হাওড়ায় কৃষিজমি দিতে রাজি হয়। এর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে জনতা। মমতা সেই আন্দোলনে জনতার পক্ষে অবস্থান নিলে বুদ্ধদেব সরকার শিল্পোন্নয়নের নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এরপর ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেন মমতা। এ ছাড়া নন্দীগ্রামে রাজ্য সরকারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাও বন্ধ করতে সক্ষম হন। ওই আন্দোলনে সরকারের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসী নিহত হয়। এসব আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মমতা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন মমতা। 

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করেন মমতা। নির্বাচনে তাঁর দল ১৯টি আসন লাভ করে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের সমস্যা, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর ও রেজওয়ান হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব ছিলেন মমতা। 

২০১০ সালে কলকাতা ও বিধাননগর মিউনিসিপালে জয়লাভ করে তাঁর দল। সেই মমতাই এখন হতে যাচ্ছেন পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী। কলকাতার সমর্থকদের কাছে মমতা দিদি বলে পরিচিত। 

আর গত শুক্রবার ( ১৩.০৫.২০১১) এই দিদির (মমতা ব্যানার্জী) কাছেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দীর্ঘ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টের। রাজ্যের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ লাল রঙের পরিবর্তে সবুজের পক্ষে রায় দিয়েছে। ২৮৫ আসনের মধ্যে মাত্র ৬৩টিতে জিতেছেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। বিপরীতে মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২২৬ আসন। সরকার গঠন করতে প্রয়োজন মাত্র ১৪৮ আসন। সেখানে তৃণমূল এককভাবেই জিতেছে ১৮৫ আসনে। এর বাইরে বিজেপিসহ অন্য দলগুলো পেয়েছে পাঁচটি আসন। 

এর মাধ্যমে ১৯৭৭ সালের ২১ জুন থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলা বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হলো। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুক্রবার দুপুরেই রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। রাজ্যের পরবর্তী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এর মাধ্যমেই ভারতের উত্তর প্রদেশ, তামিলনাডু ও দিল্লির পর এবার পশ্চিমবঙ্গ পেতে যাচ্ছে একজন নারী মুখ্যমন্ত্রী (মমতা ব্যানার্জী)। 

মমতার এ অবিস্মরণীয় সাফল্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান। এছাড়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ফোন করে মমতাকে শুভেচ্ছা জানান। 

অভিনন্দন দিদি তোমায়। 

এর আগে এখানে প্রকাশিত 
http://www.sonarbangladesh.com/articles/SaifBarkatullah 

বাতাসের সাথে আমার চোখ কথা বলছিল

একা । চৈত্র-দুর্দিনে জল হয়ে আছি 
সবুজ ঘাসের উপর বসে তাকিয়ে আছি নীল আকাশে 
গায়ে ভাসা রোদ আর মাথার উপর একঝাক সাদা বকের নাচ 
পাশেই দেখি বটগাছের শুকনো পাতার ভাঁজে চিত্রময় মুখচ্ছবি। 

ঐদিন অসংখ্য মেঘ পুব আকাশে খেলা করছিল 
আনমনে বসে বসেই আছি 
ঝিরিঝিরি বাতাসের সাথে আমার চোখ কথা বলছিল। 


একবার বাতাস আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বলতে শুরু করল 
আটাশটি বৎসর পার হয়ে গেল 
এখনো তোমার ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল ? 
কোনো মেয়ে জীবনে আসতে চায়নি তোমার? 
এই মায়াবী বিকেলটা তুমি নিঃসঙ্গতার বাঁধনে জড়িয়ে দিচ্ছো? 


আমি বুঝতে পেরেছি 
বিকেলের মিস্টি রোদ, ফুরফুরে বাতাস, মাথার উপর খোলা আকাশ 
আমায় দেখে বারবার ভেংচি দিচ্ছিল আর মুচকি হাসছিল। 

বাতাসেরা বয়ে যাচ্ছে, পাখিরা আকাশে উড়ছে 
অপলক চেয়ে থাকা চোখ অবশেষে দক্ষিণা বাতাসে 
স্মৃতির ডায়েরিতে মিশে গেলো...। 

Friday, April 15, 2011

পহেলা বৈশাখ-১৪১৮ যে ভাবে কাটালাম

সকাল ৮টা। ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই মেইল চেক করলাম সাথে টিভি সংবাদ শিরোনামগুলো দেখলাম। তারপর গোসল, ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। পথে বসে বাসে গতরাতে আসা সেল ফোনে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তার জবাব পাঠাচ্ছিলাম। সকাল ১০টার অফিস, পৌঁছলাম ১০.৪৭। প্রচণ্ড যানজট আর প্রচন্ড গরম। অফিসে পৌঁছেই নিউজ এডিট আর সাড়ে বারোটার বুলেটিন এর কাজ শেষ করে পত্রিকার ওয়েব সংষ্করণগুলো চোখ বুলাচ্ছি। এ সময় অন্যান্য কলিগদের সাথে নববর্ষের শুছেচ্ছা বিনিময় করলাম। 

দুপুরে লাঞ্চ সেরে নির্ধারিত অ্যাসাইন্টমেন্ট-এ বের হলাম। অফিস থেকে গাড়ীতে গিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জুড়ে তখন উৎসবমুখর মানুষের ঢল। নানা রঙ্গের পোশাকে রঙ্গিন পুরো এলাকা। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই যেন অপরূপ সব ক্যানভাস। 

নতুন বছরের বৈশাখী উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রাণের উৎসব। বৈশাখী উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে কোটি বাঙালির সত্ত্বা। টিএসসির সামনে দিয়ে হাঁটছি। পাশে শিশু-শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী মিলিয়ে প্রায় শতাধিক শিল্পী মঞ্চে উঠে সম্মিলনী গানের সুরের মূর্ছনায় টিএসসি চত্বর। যেন সুরের আবহে ছুঁয়ে যায় বাঙালির প্রাণকে। 

 

 

দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে তরুণ-তরুণী-শিশুদের গালে আলপনা আঁকছিলেন। সাথে বেশিরভাগ মেয়ের পরনে ছিল লাল-সাদা শাড়ী। চুলে বেলি বা রজনীগন্ধা ফুলের মালা। লাল-সাদা পাঞ্জাবী আর বাহারী ফতুয়া পরে ইচ্ছে মতো সেজে এসেছিলেন ছেলে-বুড়ো সবাই। 

শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত থেকে টিএসটি সবখানেই বসেছিলো বৈশাখী মেলার পসরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, আর বাঁশ কাঠের কারুশিল্পের বাহারী দোকানপাট। 

বিকেল ৫টা। চলে আসলাম আবার অফিসে। বৈশাখী মেলার রিপোর্টটা শেষ করে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। মীরপুর-১০ নম্বর নেমে পড়লাম বৈশাখী ঝড়ের কবলে। মীরপুর -১১ পর্যন্ত কোন রকম ভাবে পৌঁছলাম। তারপর বৃষ্টিতে আটকা থাকলাম প্রায় সোয়া এক ঘন্টা। শরীর তখন প্রচন্ড ক্লান্ত। 

বৃষ্টি একটু কমে আসলে বাসায় ফেরার চেষ্টা করলাম। কোন রিক্সাই সে সময় আসতে চাইছে না। কী আর করা। হেঁটেই পথচলা শুরু করলাম। অন্ধকার। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর মনে হলো বাসায় তো গিয়ে রান্না করতে হবে, তারচেয়ে বরং হোটেল থেকে খেয়ে যাই। শেষে তাই করলাম। বাসায় যখন পৌছলাম তখন রাত ১১.৩৮। ইলেকট্রিসিটি নেই। সেল ফোনের লাইটে মোমবাতি খুঁজে জ্বালালাম। আমার দুই পায়ে তখন প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করছি। সারা দিনের ক্লান্তি আর রাতে পায়ের প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে কখন যে চলে গেছি ঘুমের রাজ্যে........। 

এভাবেই কেটেছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।

Thursday, March 31, 2011

আমি এখনো গ্রামে থাকি

গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ.......
আমার আমার মন ভোলাই রে..........

হঠাৎ করেই গানটি ইদানিং বেশি গুনগুনিয়ে গাচ্ছি। অবশ্য গাওয়ার একটা কারণও আছে। পয়লা আগষ্ট আমি পুরোনো চাকরিটা ছেড়ে নতুন একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জয়েন করি। জয়েন করার সাতদিন পর আমার রুম মেট মনির বলল, আমি আর আগামী মাস থেকে এ বাসায় থাকবনা। কী মুশকিল। আমি আর ফয়সাল চিন্তায় পড়ে গেলাম। মনির চলে গেলে আমাদের দুই জনের পক্ষে ভাড়াটা একটু বাজেটের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। অবশ্য একটা কথা বলে রাখি..ফয়সাল, মনির এবং আমি--এই তিন জন মিলে মিরপুরের ভাড়া একটা ফ্ল্যাটে থাকতাম। তো হঠাৎ মনিরের এ ঘোষণায় আমরা একটু বিচলিত হলাম। কারণ সামনের মাসে যদি আমরা বাসা পরিবর্তন করি তাহলে কয়েকটি সমস্য । এক. রমজান মাস দুই. আমার নতুন চাকরি তিন. সামনে ঈদ। তো কী আর করা। দুই দিন পরই ফয়সাল অফিস থেকে ফোন দিল আমাকে। রুপনগরে একটা বাসা পেয়েছি। ভাড়া মোটামুটি কম। সবচেয়ে বড় কথা পরিবেশটা খুবই চমৎকার। আমি শুধু ফোনে বললাম--ওকে সব ঠিক করে ফেলেন আপনি। অবশেষে গত কয়েকদিন আগে নতুন বাসায় আমরা উঠি। বাসার চারপাশে কোন বাসা নেই। কোয়াটার কিলোমিটার দূরে দূরে সব বাসা। আমাদের এ নতুন ভাড়া বাসাটি ছয় তলা। আশে পাশে এত খোলা জায়গা যা ঢাকা শহরে কমই থকে। বাসার সাথে রাস্তা গুলোও এখনো পাকা হয়নি। গ্রামের মত কাচা রাস্তা। বাসাটির পূর্ব পাশে বিশাল একটা ঝিল। প্রথমদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ঐ ঝিলে একটা নৌকা চালাচ্ছে । আহ! মুহূর্তেই আমার হৃদয়টা পুলকিত হয়ে উঠল। কতদিন পর এরকম একটা পরিবেশ আমার চোখের সামনে। নৌকাটি দেখেই মনে পড়ে গেল ১৯৮৮ সালের বন্যার কথা। তখন আমি ছোট। বয়স তিন কিংবা চার। সেই বন্যায় কত আব্বুর সাথে নৌকায় ঘুরেছি। এরপর অফিসে যেতে যখন বাসা থেকে বের হই তখন তো আরো অন্যরকম মুহূর্ত। গ্রামের মত কাচা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। মোট পাঁচ মিনিট হাটলেই বাস স্ট্যাণ্ড। তিন মিনিট হাঁটার পর ধেখলাম একটা বাসের সাঁকো। বাহ!! কী চমৎকার। এখন থেকে পপ্রতিদিন বাস থেকে নেমে ঐ সাঁকো দিয়ে বাসায় আসবো আবার যাবো। ভাবতেই উপরের গানটি মনে পড়ে গেল। আসলেই এখন যেন আমি গ্রামে বাস করছি। সারা দিন অফিস শেষে রাতে যখন বাসায় ফিরি--তখন পাইনা কোন গাড়ীর শব্দ। নেই কোন কোলাহল। নেই শহরের ভনভন শব্দ। রাতের যখন জানালাগুলো খুলে দিয়ে শুয়ে থাকি তখন ঝিলের ঠাণ্ডা হাওয়ার পরশে প্রাণটা বেশ সবুজ সতেজ হয়ে উঠে। আর আমি গেয়ে উঠি---দিন গুলি মোর সোনার খাচায়....রইল না...রইল না....সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।

পুশ পুশ পুশ

আঁধারের ঊৎসবে মত্ত আকাশ, পৃথিবী
পৃথিবীর সব রং পুশের বর্ণিল আভায় ঝলমল
প্রযুক্তির ভীড়ে মুহুর্তেই ছড়িয়ে যায়
মিথ্যাচারের প্রকট সাবমেরিন ক্যাবলে
ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে
আইসল্যান্ডের ছাইভস্মের মতো সত্যের অস্তিত্ব
দশদিগন্তে হয়ে উঠে অচেতন।

পুশ পুশ পুশ...
এই শব্দটাই আজ বদলে দেয় পৃথিবী
বদলে দেয় দৃশ্যবলী দখলের বিস্তার।

Friday, March 11, 2011

সন্ধ্যাবাতি

টিএসসি, হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বরে 
যুগল যুগলের ছন্নছাড়া অস্থির উৎসব 
ফাস্টফুডের দোকানে, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে 
রমনা-জিয়া-ধানমণ্ডি লেক, রিক্সায়, সিএনজিতে, ফ্ল্যাটে 
ছোট বড় নানান বয়ফ্রেণ্ড-গার্লফেণ্ড কিংবা নষ্ট নরনারী 
মনোরঞ্জনে মুখরিত,লাগামহীন নৈঃশব্দ সংগীত । 

রাস্তার গলিতে, নগরীর মোড়ে শতাব্দীর পাপ 
মিশে যায় চারদিক নানান নেশায় সন্ধ্যার আকাশ 

সন্ধ্যাবাতি জ্বেলে উঠে 
শরৎরাতে অস্পষ্ট ধোঁয়ায় শহরটা বিপন্ন 
অতিআধুনিকতা যেন অধঃপতিত বেহায়াপনা 
অতঃপর সন্ধ্যাবাতি নিভে যায় 
সেই সাথে বদলে যায় 
বিকৃত রুচির কতিপয় গর্দভ মানুষ 

আর আমরা শুধু 
চোখে চোখে দেখে যাই 
সন্ধ্যাবাতির শঙ্কিত আলোর সিম্ফনি। 



রচনাকাল : ৩১.১০.২০১০, মীরপুর, রাত ১.২৩ মি.

যাযাবরের একটা গণ-জুতা নিক্ষেপ দিবস এবং একজন বাড়িওয়ালা

ছবি : যাযাবর ব্লগ থেকে 

http://www.sonarbangladesh.com/blog/jajaborrr/1352 এ লেখাটি পড়েই মূলত এ লেখার উৎপত্তি। ঘটনাটা কয়েক মাস আগের। আমি তখন মীরপুরের একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। একদিন অফিস থেকে সন্ধ্যার একটু পরে বাসায় ফিরেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের ওই বাসার দাঁড়োয়ানকে দেখলাম দুই হাতে দুইটা ইট নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকছে। আমি সেল ফোনের লাইটে দেখলাম সামনের রাস্তাটা মেরামতের জন্য ইটগুলো আনা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ওই দাঁড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম- আচ্ছা ইটগুলো নিয়ে আপনি কী করছেন? উনি আমাকে জবাব দিল- বাড়িয়ালা নাকি তাকে বলেছে ১০০টি ইট নিয়ে ভেতরে রাখতে। উহ! আল্লাহ, আমার মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ল। বাড়িয়ালা একজন সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। বাড়িয়ালার ওয়াইফ বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করে। ঢাকায় দুইটা ৫তলা বিশিষ্ঠ বাড়ী তাদের। অথচ সামান্য ১০০টি ইট চুরি করাচ্ছে দাড়োয়ানকে দিয়ে। আমি দাড়োয়ানকে বললাম, আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, মুখে কী সুন্দর দাড়ী, অথচ মালিক আপনাকে বলল, আর আপনি সেই ঘৃণ্য কাজটি করলেন? তখন দাড়োয়ান আমাকে বলল, দেখেন, কী করব আমি? না করলে চাকরি তো চলে যাবে। তখন সে অলরেডি ৪০টি ইট নিয়ে ভেতরে ঢুকিয়েছে। কোন মতে বুঝিয়ে তাকে আর কোন ইট নিতে দিলাম না। ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। চারদিক আলোকিত। প্রিয় ব্লগার ভাই-বোনেরা, আপনারাই বলেন, এ সমস্ত বাড়িয়ালাদের কী করা দরকার? জুতা মারা ছাড়া তো কোন উপায় দেখি না আমি।

Sunday, March 6, 2011

ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স : চাইল্ড সেক্স


২০০২ সালে ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স আয়োজিত শিশু যৌন নির্যাতন বিষয়ক এক কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম। ঐ কর্মশালার সার সংক্ষেপ আজকের লেখা।

শিশুর যৌন নির্যাতন কি?
অতি বিশ্বাসের ফলে বয়স্কদের দ্বারা আমাদের শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে।

কতভাবে একটি শিশুকে নির্যাতন করা হয়?
০১) স্পর্শ, মুখের কথা, চাহনী
০২) চুমু খাওয়া বা জড়িয়ে ধরা
০৩) যৌন সংবেদনশীল অংগে হাত দেয়া
০৪) সর্ম্পর্ণ যৌন ক্রিয়া করা

পরিচিতরা কেন বেশী নির্যাতন করতে পারে?
০১) অভিভাবক সাবধানে থাকার প্রয়োজন মনে করেনা।
০২) নির্যাতনকারী কাছে আসার সুযোগ পায়
০৩) কর্তৃত্বমূলক সম্পর্ক তৈরির সুযোগ পায়
০৪) শিশুর পক্ষে বাহ্যিক বাধা নেই
০৫) শিশুর অভ্যন্তরীণ বাধা বা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অভাব।

কারা নির্যাতনকারী ?

০১) পরিচিত
০২) পরিবারের লোক
০৩)পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়
০৪) প্রতিবেশী
০৫) পরিচিত শুভাক্ষাংখী
০৬) বিকারগ্রস্থ
০৭) অপরিচিত

কীভাবে নির্যাতনকারী শিশুকে বশে আনে ?
০১) প্রলোভন দেখিয়ে
০২)ভয় দেখিয়ে
০৩) নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
০৪)সহিংসতা

শিশু কেন বলতে পারেনা ?

০১) সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে ধারণার অভাব
০২) প্রকাশের ভাষা জানা নেই
০৩) সামাজিক কারণ
০৪) নির্ভরতার অভাব
০৫) লজ্জা
০৬) অপরাধবোধ ও ভয়

যৌন নির্যাতনে শিশুর মনোজগতের প্রতিক্রিয়া :
০১) যৌন নির্যাতনের কারণে তার আমিত্ববোধ এবং মনোজগত বদলে যায়
০২) শিশু শারিরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যায় ভোগে
০৩) নিজেকে অসহায় ভাবে
০৪) নিজেকে নষ্ট মনে করে
০৫) লজ্জা ও অপরাধ বোধে ভোগে
০৬) সবার কাছে থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে

শিশুর আচরণে যৌন নির্যাতনের প্রভাব :
০১) আত্মনির্যাতন
০২) অসহায়ত্ব বা আক্রমনাত্বক মনোভাব
০৩) আবেগহীনতা /নির্জিব
০৪) বিশ্বাসঘাতকতাকেই অনিবার্য বলে ধরে নেয়
০৫) যৌন আচরণে পুনরাবৃত্তি ঘটায়
০৬) স্বাভাবিক যৌন জীবনে অনীহা

নিজেকে সংশোধন করা :
আত্মসজেতনতা-ক্ষমতায়ন-বাঁচার কৌশল

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :
০১) বিশ্বাস করা ( পরিবারের সব সদস্য )
০২) সাবধানতা
০৩) ব্যাক্তিগত অংগের নাম স্বাভাবিকভাবে শেখানো
০৪) অপছন্দনীয় আদর, স্পর্শের অনুভূতি ও পার্থক্য করতে সহযোগিতা
০৫) এলাকায় সবাইকে সচেতন করা
০৬)নির্ভয়ে সব কিছু অভিভাবকের সাথে শেয়ার করার পরিবেশ তৈরি করা

Thursday, February 24, 2011

বই মেলায় আমার ৩টি বই


বই মেলায় বেরিয়ে ২টি নতুন বই ও ১টি পুরোনো

০১ ) সম্ভাবনার বাংলাদেশ ( গবেষণা গ্রন্থ)
প্রকাশ : একুশে গ্রন্থ মেলা -২০১১
প্রকাশক : পারিজাত
স্টল নং # ২৮৫-২৮৬
প্রচ্ছদ : মাসুক হেলাল


০২) পারুল ( কিশোর উপন্যাস )
প্রকাশক : পরিলেখ
প্রকাশ : একুশে গ্রন্থমেলা ২০১১
স্টল : ৪৩৭
প্রচ্ছদ : কামরুল হাসান মিলন


০৩) জ্যোৎস্না রাতের গল্প ( কাব্যগ্রন্থ)
প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০১০
প্রকাশক : চয়ন
স্টল : ২৩০
প্রচ্ছদ : খলিল রহমান

Tuesday, February 22, 2011

একগুচ্ছ রোমান্টিক কবিতা

একগুচ্ছ রোমান্টিক কবিতা
উৎসর্গ : যাদের রোমান্টিক মন তাদের উদ্দেশ্যে


(০১)

তুমি আছো বলেই আমি যেন স্বপ্নপাখি
সবকিছুতেই উদ্দোম গতি যেন
বেঁচে উঠি প্রতিনিয়ত

তোমার স্পর্শতায়।

তুমি আছো বলেই ভাবনায় কাটে কত রাত
বর্নিল কামনায় চেপে থাকে শরীর

অনুভবে তোমায়।
তুমি আছো বলেই আমি যেন পাহাড়ী নদী
অবিরাম বেয়ে যাই সাগর সঙ্গমে
তোমার উষ্ণতায়।

তুমি আছো বলেই আমার কোন কষ্ট নেই
আমার আছে ভালবাসার অনন্ত আকাশ

ভালবেসে তোমায়।


(০২)

তুমি এসে কষ্টের আকাশটাকে
ভালবাসার আঁচলে জড়ালে
রোমাঞ্চ শিশিরে নেভালে
মনের অব্যক্ত দহন জ্বালা।

বুকের গহীন অন্ধকারে
উড়িয়ে দিলে
ভালবাসার প্রজাপতি
কষ্টগুলো পাপড়ি মেলে সুবাস ছড়ায়
ভাল লাগার অনুরণে।

তুমি এসে খুলে দিলে
যন্ত্রণার বন্ধ দুয়ার
ভরিয়ে দিলে মনের ভেতর
ভালবাসার মর্ম ফোয়ার।

(০৩)


তুমি আমার
শরৎ সকাল
ভালবাসার মিষ্টি রোদে
ভরিয়ে দাও মন।

গাছের ছায়ায়
সবুজ মায়ায়
হৃদয় দোলে
শীতের আমেজ
ভাল লাগায় এখন।

মরা নদীর বান ডেকে যায়
ঢেউ খেলে যায় ভালবাসার বুকে
তুমি আসো যখন।

ভালবাসার বর্ষা নামে
আমার চোখের কোনে
হঠাৎ যখন বলে উঠো
চলে যাবো এখন।

Sunday, February 13, 2011

প্রকৃতির বীণায় কে যেন গো সুর বেঁধেছে



প্রকৃতির বীণায় কে যেন গো সুর বেঁধেছে।
কেউবা কী নেশার টানে বনে বনে ফুলের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে।
বন-বনানী নব পল্লবের জয়গান আর কীট-পাখির গুঞ্জনে কাকলীতে মুখর হয়ে উঠেছে। কবির ভাষা-
‘পলাশ ফুটেছে' শিমুল ফুটেছে।
এসেছে দারুণ মাস।'

আর বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ভাষায়--
‘বসন্ত বাতাসে•••সই গো
বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...।’

হ্যাঁ, আজ রোববার পহেলা ফাল্গুন। বাংলা বর্ষা বিদায়ী ঋতু বসন্তের সূচনা দিবস। তাই তো দিকে দিকে বলছে পার্থিব-অপার্থিব নানা আয়োজন।
এর কাব্যরূপ-
‘আহা আজি এ বসন্তে
কত ফুল ফোটে
কত বাঁশি বাজে/কত পাখি গায়....।'


পলাশ-শিমুলের ডালে ডালে রক্তিম উচ্ছলতা। বনের নিভৃত কোণে, মেঠোপথের ধারে কারও দেখার অপো না করেই ফুটেছে আরও কত নাম না-জানা ফুল। কোকিলের কুহুতান আর মৃদুমন্দ বাতাসও মনে করিয়ে দেয় বসন্তের কথা।
আজ পয়লা ফাগুন। মিলেমিশে একে অপরে একাকার হওয়ার দিন। প্রকৃতির পরিবর্তনে শোক-তাপ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই মেতে উঠুক বসন্তের আবাহনে।

কচি পাতায় আলোর নাচন, হৃদয়ের উচাটন আর ফুল ফোটার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে-পারিজাতের রঙের কোলাহল, আর বর্ণাঢ্য সমারোহে অশোক-কিংশুকে বিমোহিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়,
‘এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে
খুনেরা ফাগুন...।’

বসন্ত মানেই ফুলের স্ফুরণ। তার বন্দনায় সব অনুষঙ্গকে ছাপিয়ে যায় ফুলই। কবিগুরু গেয়েছেন,
‘আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে...।’


বাংলা প্রকৃতি এখন বসন্তী বাস পরা। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠছে রিক্ত বৃক্ষাদি। বেশুমার বনফুল হতে গুণ গুণ করে মৌ-রাগ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মধুমক্ষিকা। বিচিত্র সব মুকুলের মদির সুবাসে মন-প্রাণ হিন্দোলিত হয়ে উঠছে। আদিগন্ত ফাগবেশ আর ব্যঞ্জনাময় উৎসব-আমেজ মানুষ মাত্রকেই আকৃষ্ট করে। এই জন্যই ধন্য বসন্তের মাথায় স্মরণাতীতকাল ধরে ঋতুরাজ্যের মুকুট।

ফাল্গুনের তিরিশ দিন, তিরিশ রাত পেরিয়ে বসন্ত তার যৌবনের চৌকাঠ মাড়িয়ে চৈত্রে পদার্পণ করবে। ফাল্গুন মাসের নাম ‘ফাল্গুনী' তারা আর চৈত্র মাস ‘চিত্রা' তারার নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হয়েছে। এ সময় মহান আল্লাহপাকের অপার সৃষ্টি মহিমায় দক্ষিণ গোলার্ধ পরিভ্রমণ শেষে সূর্য তার কক্ষপথে উত্তর-অভিমুখে ধাবিত হতে থাকে। আপনা হতেই প্রকৃতিতে লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। উত্তরী বায়ুর যাত্রাপথ রুদ্ধ হয়ে দখিনা মৃদুমন্দ সমীরণ লহর তোলে। তরুলতা পুরানো পাতা ঝেড়ে ফেলে নববধূরূপে মুকুলিত হয়। পত্রপল্লবে সুশোভিত হয় সবুজ উদ্যান। সত্যিই বসন্তের আমোদনে ফাল্গুনের ঝিরি ঝিরি হাওয়া, নির্মেঘ রোদ্দূর নতুন মাত্রা যোগ করে নিসর্গে। কোকিলের কুহুতান তো বসন্তেরই মর্মগান।

ফাল্গুন আসার আগেই অবশ্য আমমঞ্জরী কোষগুলো পরিণত হতে থাকে। কাঁঠাল গাছের শাখায় শাখায় ধরে মুছি (মুকুল)। লিচু গাছগুলোও ফলবতী হয়ে উঠেছে এর চেয়েও বেশি বসন্তকে উপলব্ধি করা যায় রক্তিম পলাশ, শিমুল, কাঞ্চন, পারিজাত, মাধবী, গামারী আর মৃদুগঞ্চের ছোট ছোট বরুণ ফুলে। এছাড়া গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়াসহ হাজারো নামের বর্ণালী ফুল তো বসন্তের সাজ আভরণ হিসেবেই বিবেচ্য।

বসন্তকাল এলে গ্রাম থেকে নগর-আবহমান বাংলার সর্বত্রই মেলার মওসুমও শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে ফাল্গুনে ৭৩টি ও চেত্রে ২৪৯টি মেলা। এগুলোয় বসে দোলযাত্রা, চৈত্র তিথি, বারণী, চৈত্র সংক্রান্তি ইত্যাদি বিশেষ উপলক্ষে। মেলাকে ঘিরে প্রতিটি জনপদে উৎসবের জোয়ার বয়ে যায়। এসব মেলার মেয়াদকাল এক থেকে সাতদিন পর্যন্ত। লোক-কারুশিল্প পণ্য ছাড়াও এসব মেলায় বাহারী পসরা বসে। আধুনিক ব্যবহার্য ভোগপণ্য ও বাদ যায় না।

এর বাইরে ফাল্গুনের আরেক পরিচয় ভাষা শহীদদের তপ্তশোনিত্যাক্ত মাস। উনিশশ বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আটই ফাল্গুন মাতৃভাষা ‘বাংলা' প্রতিষ্ঠার জন্য রফিক, সালাম, জববার প্রমুখ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। বার বার ফিরে আসে ফাল্গুন, আসে বসন্ত। শোক নয়, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী মোকাবিলার দুর্বিনীত সাহস আর অপরিমেয় শক্তি নিয়ে। নৈসর্গিক ক্যানভাসে রক্তাক্ত বর্ণমালা যেন এঁকে দেয় অনির্বচনীয় সুন্দর এক আল্পনা। প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে উদার সড়কের বুকে। দেয়ালগাত্র থেকে লোহিত ধারার মোহনা শহীদ মিনার পর্যন্ত।

বসন্তকে ঘিরে বাঙালির রয়েছে বেশ কয়েকটি উৎসব। এসবের মধ্যে ফাল্গুনী পূর্ণিমা, গাজন, চড়ক পূজা, দোলযাত্রা, চৈত্রসংক্রান্তি অন্যতম। তবে বর্তমানে নানা প্রতিকূলতা ও গ্রামেগঞ্জে নগরায়ণের বিস্তার ঘটায় এসব উৎসব আর আগের মতো ঘটা করে পালিত হয় না।