Pages

Thursday, May 13, 2010

সম্ভাবনার বাংলাদেশ [৮ম কিস্তি ]




[সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। এ সম্পদ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ। এসব সম্ভাবনার কথা নিয়ে এই বিশেষ রচনাটি আরটিএনএন এর পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাইফ বরকতুল্লাহ । আজ প্রকাশিত হল এর ৮ম কিস্তি।]

১. গারোর বুকে মধুটিলা হতে পারে কোটি টাকার রাজস্ব
শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ মধুটিলা ইকোপার্ক এখন হাজারো ভ্রমণপিপাসুর পথ চারণায় মুখর। ময়মনসিংহ বন বিভাগ ১৯৯৯ সাল থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার সমশ্চূড়া ইউনিয়নের ২৯০ একর এবং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ৯০ একরসহ মোট ৩৮০ একর পাহাড়ি টিলার ওপর মধুটিলা ইকোপার্কে এর প্রাথমিক অবকাঠামো ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ দুই দফায় প্রায় ৪কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ করে। এরপর ২০০৬-০৭ অর্থ বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইকো পার্কের যাত্রা শুরু হয়।
শুরুর বছরেই ইকোপার্কের বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয় ৫২ হাজার ৮৩১ টাকা। এরপর ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫৮ টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে আয় হয় ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৬ টাকা।
চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
প্রতি বছর এই পার্কে বিশেষ করে শীত মওসুমে প্রতিদিন শ’ শ” বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে শেরপুরসহ দেশের প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী পিকনিক, শিা সফর ও ভ্রমণে আসে।
সূত্র জানায়, এই ইকোপার্কে বর্তমানে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোটিং, স্টার ব্রিজ, স্ট্রেম্পিং রোড বা সুউচ্চ পাহাড়ে উঠার জন্য ধাপ রাস্তা (সিঁড়ি), মিনি শিশু পার্ক, মহুয়া রেস্টহাউজ, স্টিলের ছাতা, ইকো ফ্রেন্ডলি ব্রেঞ্চ, আধুনিক পাবলিক টয়লেট, পার্কের প্রবেশ পথ ধরে যাওয়া বিভিন্ন সড়কের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জীব জন্তুর ভাস্কর্য।
এছাড়া বিরল প্রজাতি, পশু পাখি আকৃষ্ট, ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান, মৌসুমী ফুলের বাগান এবং সাত রঙের গোলাপ বাগান রয়েছে।
এসব উপভোগের জন্য ইকোপার্কে ঢুকতে প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজন ৫ টাকা এবং শিশু কিশোরদের জন্য ২ টাকা। বাস, ট্রাক ও মিনিবাস ৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ও জিপ ৩০ টাকা, বেবি ট্যাক্সি বা অটো রিক্সা ১৫ টাকা,
এছাড়া ইকোপার্কের ভেতরে পেডেল বোট ১২ টাকা, নৌকা চালানো ৬ টাকা, ওয়াচ টাওয়ারে উঠা প্রতিজন ২ টাকা, নাটক বা চলচ্চিত্রের শুটিং (৮ ঘন্টা) ১০০০ টাকা, রেস্টহাউজ ভাড়া (শুধুমাত্র দিনের বেলা) ৪৫০০ টাকা, শিশু পার্কে ২ টাকা এবং টয়লেটসহ গোল ঘরের (রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া জন্য সুব্যবস্থা) প্রতিদিন ৬০০ টাকা।
মধুটিলা ইকোপার্ক ঘিরে শেরপুরের পরিচিতি দ্রুত প্রসার ঘটায় জেলার সচেতন মহল মনে করছে, সরকারের উচিত এই ইকোপার্ককে পর্যটন খাতে নিয়ে দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র করা হলে সীমান্তবর্তী এই গারো পাহাড় এলাকার অবহেলিত পাহাড়ি জনসাধারণের ভাগ্যের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের রাজস্ব খাতেও যোগ হবে বাড়তি আয়।

২. ব্যাঙ ও ফড়িং দিয়ে মশক নিধন
[ মাত্র কয়েক হাজার টাকায় উৎপাদন করা যাবে লাখ লাখ ব্যাঙাচি ও নিম্ফ ]

ব্যাঙ এবং ফড়িং দিয়ে সহজেই মশা নিধন সম্ভব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার পরিবেশবান্ধব এই সহজ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন। যেকোনো ধরনের মশা জন্মলগ্নেই নিধন করবে ব্যাঙ এবং ফড়িং। তিকর রাসায়নিক মশা নাশকের প্রাকৃতিক বিকল্প হিসেবে শতভাগ সফলতার সঙ্গে এদের ব্যবহার করা যাবে। এতে সাশ্রয় হবে সরকারের কোটি কোটি টাকা। তবে এ জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি দরকার মানুষের সচেতনতা। ব্যাঙ এবং ফড়িং না মেরে তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাশার ব্যাঙ এবং ফড়িং দিয়ে মশা দমনের এ পরিবেশবান্ধব ও সহজ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন।
জানা গেছে, ব্যাঙ, ফড়িং এবং মশা এ তিনটি প্রাণীই তাদের জীবনের প্রথম দশায় পানিতে বাস করে। ব্যাঙের ব্যাঙাচি, ফড়িংয়ের নিম্ফ (অপূর্ণাঙ্গ দশা) এবং মশার লার্ভা (শুককীট) একই ধরনের পানিতে জন্মগ্রহণ করে। জীবনকালের শুরুর এ সহাবস্থানের কারণেই কবিরুল বাশার মশা দমনে ব্যাঙ এবং ফড়িংকে কাজে লাগানোর চিন্তা করেন। পরবর্তীকালে গবেষণাগার এবং উন্মুক্ত জলাশয় উভয় েেত্রই তিনি ব্যাঙাচি ও নিম্ফ দিয়ে মশা দমনে চমৎকার ফল পান। ব্যাঙাচি ও ফড়িংয়ের নিম্ফ মশার লার্ভাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
তিনি জানান, ব্যাঙাচি ও ফড়িংয়ের নিম্ফ দিয়ে মশা দমন সাশ্রয়ী, সহজ প্রয়োগযোগ্য, পরিবেশবান্ধব, প্রাণী তথা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও নিরাপদ। একই সঙ্গে এ পদ্ধতি মানুষকে রাসায়নিক মশানাশকের ব্যবহার থেকে সরে আসতে সাহায্য করবে। ফলে রাসায়নিক মশানাশকের তিকর প্রভাব থেকে রা পাবে মানুষ।

কবিরুল বাশার জানান, জলাশয়ে স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ ছাড়াও গবেষণাগারে খুব সহজেই ব্যাঙাচি বা নিম্ফ উৎপাদন করা যায়। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার কন্ট্রোল ইনসেক্ট রিআরিং হাউস স্থাপন করে বছরজুড়ে ব্যাঙাচি ও নিম্ফ উৎপাদন করা যাবে। হাউসটি স্থাপন করতে খরচ পড়বে প্রায় সত্তর লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র কয়েক হাজার টাকায় উৎপাদন করা যাবে লাখ লাখ ব্যাঙাচি ও নিম্ফ। হাউসটিও ব্যবহারযোগ্য থাকবে আজীবন। হাউনে ব্যাঙাচি ও নিম্ফ উৎপাদন করে ঢাকাসহ দেশের মশাপ্রবণ এলাকাগুলোর জলাশয়ে ছেড়ে দিলে মশা প্রাকৃতিকভাবেই প্রায় শতভাগ দমন করা সম্ভব হবে। ব্যাঙ শুধু ব্যাঙাচি দশায় মশা ভণ করলেও ফড়িং নিম্ফ দশা ও পূর্ণবয়স্ক উভয় দশাতেই মশা খেয়ে থাকে।
কবিরুল বাশার ফাইলেরিয়া বা গোঁদ রোগের বিস্তারে কিউলেক্স মশার ভ‚মিকা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মশাটি দমনের পদ্ধতিগুলো উদ্ভাবন করেন। কিউলেক্স কুইনকুইফেসিয়েটাস মশা ফাইলেরিয়া রোগের বিস্তার ঘটায়। ঢাকার মশার মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই হচ্ছে এই কিউলেক্স মশা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে বিশ্বের ৭৩টি দেশের বারো কোটি লোক ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও মেহেরপুর জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। রোগটি দমনে ওইসব অঞ্চলে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি ডোজ বিলিয়ে থাকে। এ প্রজাতির মশা ডোবা, নর্দমা, নালা, ড্রেন, পচা পুকুর ও জমে থাকা ময়লাপানিতে বংশবিস্তুার করে। এসব পানিতেই জন্মে ব্যাঙাচি ও নিম্ফ।
তিনি জানান, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার জন্য কন্ট্রোল ইনসেক্ট রিআরিং হাউস স্থাপন করতে হবে। এজন্য তিনি এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাবর সত্তর লাখ টাকার একটি প্রজেক্ট দাখিল করেছেন। প্রজেক্ট পাস হলে বছরজুড়ে সারা দেশের মশা নিধনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নিম্ফ ও ব্যাঙাচি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন মশাপ্রবণ এলাকার জলাশয়গুলোতে নিম্ফ ও ব্যাঙাচি ছেড়ে দিলে মশা নিধনে সরকারকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাসায়নিক মশানাশক ব্যবহার করতে হবে না। বরং প্রাকৃতিক উপায়েই মশা প্রায় শতভাগ দমন করা সম্ভব হবে। তবে এর জন্য সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সচেতনতাও দরকার। ব্যাঙ এবং ফড়িং না মেরে তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যাঙাচি ও নিম্ফ দিয়ে একমাত্র এডিস মশা নিধন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া অন্যান্য সকল প্রকারের মশাই নিধন করা যাবে।
৩. আলু রফতানির অপার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় আলু রফতানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ভারত উল্লেখিত দেশগুলোতে কমবেশি প্রায় ২শ মার্কিন ডলারে প্রতিটন আলু রফতানি করছে। অপরদিকে পাকিস্তান রফতানি করছে প্রতিটন প্রায় ১শ ৯০ মার্কিন ডলারে।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশ থেকে দুবাই আলু রফতানি করা হয়েছে টন প্রতি প্রায় ২শ ২০ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশকে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববাজারে আলু রফতানি করতে হলে তাদের কাছাকাছি দামে আলু রফতানি করতে হবে অথবা আলু রফতানির অনুক‚লে নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে দুবাই, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বে আলু রফতানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে বলে রফতানিকারকরা জানান। উল্লেখ্য, সারাদেশে এ মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকার আলু বীজ, সার ও কীটনাশক ওষুধের মূল্য হ্রাস করায় এবং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকার কারণেই এবার আলু উৎপাদনের ল্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

চলতি বছর দেশে প্রায় ৭৫ লাখ টন আলু উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন ল্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গিয়ে কমবেশি ১ কোটি টনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুতরাং উপরের বিষয় সমূহ যদি প্রপারলি ইম্পি­মেনটেশন করা যায় তবে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।
[ চলবে ]

তথ্যসূত্র : ১.দৈনিক ইত্তেফাক ২. দৈনিক নয়াদিগন্ত ৩. আরটিএনএন ৪.দৈনিক সমকাল

1 comment:

  1. বেশ লাগলো। এইতো ক'দিন আগেই আমিও লিখলামঃ
    চোখ যতদূর যায় দেখি এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ --
    স্বপ্নভর্তি ধাত্রী মায়ের হৃদয় ছোঁয়া বাংলাদেশ।
    ~ নুরুন্নাহারশিরীন ঢাকা বাংলাদেশ

    ReplyDelete