Pages

Friday, April 15, 2011

পহেলা বৈশাখ-১৪১৮ যে ভাবে কাটালাম

সকাল ৮টা। ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই মেইল চেক করলাম সাথে টিভি সংবাদ শিরোনামগুলো দেখলাম। তারপর গোসল, ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। পথে বসে বাসে গতরাতে আসা সেল ফোনে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তার জবাব পাঠাচ্ছিলাম। সকাল ১০টার অফিস, পৌঁছলাম ১০.৪৭। প্রচণ্ড যানজট আর প্রচন্ড গরম। অফিসে পৌঁছেই নিউজ এডিট আর সাড়ে বারোটার বুলেটিন এর কাজ শেষ করে পত্রিকার ওয়েব সংষ্করণগুলো চোখ বুলাচ্ছি। এ সময় অন্যান্য কলিগদের সাথে নববর্ষের শুছেচ্ছা বিনিময় করলাম। 

দুপুরে লাঞ্চ সেরে নির্ধারিত অ্যাসাইন্টমেন্ট-এ বের হলাম। অফিস থেকে গাড়ীতে গিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জুড়ে তখন উৎসবমুখর মানুষের ঢল। নানা রঙ্গের পোশাকে রঙ্গিন পুরো এলাকা। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই যেন অপরূপ সব ক্যানভাস। 

নতুন বছরের বৈশাখী উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রাণের উৎসব। বৈশাখী উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে কোটি বাঙালির সত্ত্বা। টিএসসির সামনে দিয়ে হাঁটছি। পাশে শিশু-শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী মিলিয়ে প্রায় শতাধিক শিল্পী মঞ্চে উঠে সম্মিলনী গানের সুরের মূর্ছনায় টিএসসি চত্বর। যেন সুরের আবহে ছুঁয়ে যায় বাঙালির প্রাণকে। 

 

 

দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে তরুণ-তরুণী-শিশুদের গালে আলপনা আঁকছিলেন। সাথে বেশিরভাগ মেয়ের পরনে ছিল লাল-সাদা শাড়ী। চুলে বেলি বা রজনীগন্ধা ফুলের মালা। লাল-সাদা পাঞ্জাবী আর বাহারী ফতুয়া পরে ইচ্ছে মতো সেজে এসেছিলেন ছেলে-বুড়ো সবাই। 

শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত থেকে টিএসটি সবখানেই বসেছিলো বৈশাখী মেলার পসরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, আর বাঁশ কাঠের কারুশিল্পের বাহারী দোকানপাট। 

বিকেল ৫টা। চলে আসলাম আবার অফিসে। বৈশাখী মেলার রিপোর্টটা শেষ করে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। মীরপুর-১০ নম্বর নেমে পড়লাম বৈশাখী ঝড়ের কবলে। মীরপুর -১১ পর্যন্ত কোন রকম ভাবে পৌঁছলাম। তারপর বৃষ্টিতে আটকা থাকলাম প্রায় সোয়া এক ঘন্টা। শরীর তখন প্রচন্ড ক্লান্ত। 

বৃষ্টি একটু কমে আসলে বাসায় ফেরার চেষ্টা করলাম। কোন রিক্সাই সে সময় আসতে চাইছে না। কী আর করা। হেঁটেই পথচলা শুরু করলাম। অন্ধকার। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর মনে হলো বাসায় তো গিয়ে রান্না করতে হবে, তারচেয়ে বরং হোটেল থেকে খেয়ে যাই। শেষে তাই করলাম। বাসায় যখন পৌছলাম তখন রাত ১১.৩৮। ইলেকট্রিসিটি নেই। সেল ফোনের লাইটে মোমবাতি খুঁজে জ্বালালাম। আমার দুই পায়ে তখন প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করছি। সারা দিনের ক্লান্তি আর রাতে পায়ের প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে কখন যে চলে গেছি ঘুমের রাজ্যে........। 

এভাবেই কেটেছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।