Pages

Thursday, March 31, 2011

আমি এখনো গ্রামে থাকি

গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ.......
আমার আমার মন ভোলাই রে..........

হঠাৎ করেই গানটি ইদানিং বেশি গুনগুনিয়ে গাচ্ছি। অবশ্য গাওয়ার একটা কারণও আছে। পয়লা আগষ্ট আমি পুরোনো চাকরিটা ছেড়ে নতুন একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জয়েন করি। জয়েন করার সাতদিন পর আমার রুম মেট মনির বলল, আমি আর আগামী মাস থেকে এ বাসায় থাকবনা। কী মুশকিল। আমি আর ফয়সাল চিন্তায় পড়ে গেলাম। মনির চলে গেলে আমাদের দুই জনের পক্ষে ভাড়াটা একটু বাজেটের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। অবশ্য একটা কথা বলে রাখি..ফয়সাল, মনির এবং আমি--এই তিন জন মিলে মিরপুরের ভাড়া একটা ফ্ল্যাটে থাকতাম। তো হঠাৎ মনিরের এ ঘোষণায় আমরা একটু বিচলিত হলাম। কারণ সামনের মাসে যদি আমরা বাসা পরিবর্তন করি তাহলে কয়েকটি সমস্য । এক. রমজান মাস দুই. আমার নতুন চাকরি তিন. সামনে ঈদ। তো কী আর করা। দুই দিন পরই ফয়সাল অফিস থেকে ফোন দিল আমাকে। রুপনগরে একটা বাসা পেয়েছি। ভাড়া মোটামুটি কম। সবচেয়ে বড় কথা পরিবেশটা খুবই চমৎকার। আমি শুধু ফোনে বললাম--ওকে সব ঠিক করে ফেলেন আপনি। অবশেষে গত কয়েকদিন আগে নতুন বাসায় আমরা উঠি। বাসার চারপাশে কোন বাসা নেই। কোয়াটার কিলোমিটার দূরে দূরে সব বাসা। আমাদের এ নতুন ভাড়া বাসাটি ছয় তলা। আশে পাশে এত খোলা জায়গা যা ঢাকা শহরে কমই থকে। বাসার সাথে রাস্তা গুলোও এখনো পাকা হয়নি। গ্রামের মত কাচা রাস্তা। বাসাটির পূর্ব পাশে বিশাল একটা ঝিল। প্রথমদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ঐ ঝিলে একটা নৌকা চালাচ্ছে । আহ! মুহূর্তেই আমার হৃদয়টা পুলকিত হয়ে উঠল। কতদিন পর এরকম একটা পরিবেশ আমার চোখের সামনে। নৌকাটি দেখেই মনে পড়ে গেল ১৯৮৮ সালের বন্যার কথা। তখন আমি ছোট। বয়স তিন কিংবা চার। সেই বন্যায় কত আব্বুর সাথে নৌকায় ঘুরেছি। এরপর অফিসে যেতে যখন বাসা থেকে বের হই তখন তো আরো অন্যরকম মুহূর্ত। গ্রামের মত কাচা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। মোট পাঁচ মিনিট হাটলেই বাস স্ট্যাণ্ড। তিন মিনিট হাঁটার পর ধেখলাম একটা বাসের সাঁকো। বাহ!! কী চমৎকার। এখন থেকে পপ্রতিদিন বাস থেকে নেমে ঐ সাঁকো দিয়ে বাসায় আসবো আবার যাবো। ভাবতেই উপরের গানটি মনে পড়ে গেল। আসলেই এখন যেন আমি গ্রামে বাস করছি। সারা দিন অফিস শেষে রাতে যখন বাসায় ফিরি--তখন পাইনা কোন গাড়ীর শব্দ। নেই কোন কোলাহল। নেই শহরের ভনভন শব্দ। রাতের যখন জানালাগুলো খুলে দিয়ে শুয়ে থাকি তখন ঝিলের ঠাণ্ডা হাওয়ার পরশে প্রাণটা বেশ সবুজ সতেজ হয়ে উঠে। আর আমি গেয়ে উঠি---দিন গুলি মোর সোনার খাচায়....রইল না...রইল না....সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।

পুশ পুশ পুশ

আঁধারের ঊৎসবে মত্ত আকাশ, পৃথিবী
পৃথিবীর সব রং পুশের বর্ণিল আভায় ঝলমল
প্রযুক্তির ভীড়ে মুহুর্তেই ছড়িয়ে যায়
মিথ্যাচারের প্রকট সাবমেরিন ক্যাবলে
ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে
আইসল্যান্ডের ছাইভস্মের মতো সত্যের অস্তিত্ব
দশদিগন্তে হয়ে উঠে অচেতন।

পুশ পুশ পুশ...
এই শব্দটাই আজ বদলে দেয় পৃথিবী
বদলে দেয় দৃশ্যবলী দখলের বিস্তার।

Friday, March 11, 2011

সন্ধ্যাবাতি

টিএসসি, হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বরে 
যুগল যুগলের ছন্নছাড়া অস্থির উৎসব 
ফাস্টফুডের দোকানে, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে 
রমনা-জিয়া-ধানমণ্ডি লেক, রিক্সায়, সিএনজিতে, ফ্ল্যাটে 
ছোট বড় নানান বয়ফ্রেণ্ড-গার্লফেণ্ড কিংবা নষ্ট নরনারী 
মনোরঞ্জনে মুখরিত,লাগামহীন নৈঃশব্দ সংগীত । 

রাস্তার গলিতে, নগরীর মোড়ে শতাব্দীর পাপ 
মিশে যায় চারদিক নানান নেশায় সন্ধ্যার আকাশ 

সন্ধ্যাবাতি জ্বেলে উঠে 
শরৎরাতে অস্পষ্ট ধোঁয়ায় শহরটা বিপন্ন 
অতিআধুনিকতা যেন অধঃপতিত বেহায়াপনা 
অতঃপর সন্ধ্যাবাতি নিভে যায় 
সেই সাথে বদলে যায় 
বিকৃত রুচির কতিপয় গর্দভ মানুষ 

আর আমরা শুধু 
চোখে চোখে দেখে যাই 
সন্ধ্যাবাতির শঙ্কিত আলোর সিম্ফনি। 



রচনাকাল : ৩১.১০.২০১০, মীরপুর, রাত ১.২৩ মি.

যাযাবরের একটা গণ-জুতা নিক্ষেপ দিবস এবং একজন বাড়িওয়ালা

ছবি : যাযাবর ব্লগ থেকে 

http://www.sonarbangladesh.com/blog/jajaborrr/1352 এ লেখাটি পড়েই মূলত এ লেখার উৎপত্তি। ঘটনাটা কয়েক মাস আগের। আমি তখন মীরপুরের একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। একদিন অফিস থেকে সন্ধ্যার একটু পরে বাসায় ফিরেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের ওই বাসার দাঁড়োয়ানকে দেখলাম দুই হাতে দুইটা ইট নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকছে। আমি সেল ফোনের লাইটে দেখলাম সামনের রাস্তাটা মেরামতের জন্য ইটগুলো আনা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ওই দাঁড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম- আচ্ছা ইটগুলো নিয়ে আপনি কী করছেন? উনি আমাকে জবাব দিল- বাড়িয়ালা নাকি তাকে বলেছে ১০০টি ইট নিয়ে ভেতরে রাখতে। উহ! আল্লাহ, আমার মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ল। বাড়িয়ালা একজন সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। বাড়িয়ালার ওয়াইফ বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করে। ঢাকায় দুইটা ৫তলা বিশিষ্ঠ বাড়ী তাদের। অথচ সামান্য ১০০টি ইট চুরি করাচ্ছে দাড়োয়ানকে দিয়ে। আমি দাড়োয়ানকে বললাম, আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, মুখে কী সুন্দর দাড়ী, অথচ মালিক আপনাকে বলল, আর আপনি সেই ঘৃণ্য কাজটি করলেন? তখন দাড়োয়ান আমাকে বলল, দেখেন, কী করব আমি? না করলে চাকরি তো চলে যাবে। তখন সে অলরেডি ৪০টি ইট নিয়ে ভেতরে ঢুকিয়েছে। কোন মতে বুঝিয়ে তাকে আর কোন ইট নিতে দিলাম না। ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। চারদিক আলোকিত। প্রিয় ব্লগার ভাই-বোনেরা, আপনারাই বলেন, এ সমস্ত বাড়িয়ালাদের কী করা দরকার? জুতা মারা ছাড়া তো কোন উপায় দেখি না আমি।

Sunday, March 6, 2011

ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স : চাইল্ড সেক্স


২০০২ সালে ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স আয়োজিত শিশু যৌন নির্যাতন বিষয়ক এক কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম। ঐ কর্মশালার সার সংক্ষেপ আজকের লেখা।

শিশুর যৌন নির্যাতন কি?
অতি বিশ্বাসের ফলে বয়স্কদের দ্বারা আমাদের শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে।

কতভাবে একটি শিশুকে নির্যাতন করা হয়?
০১) স্পর্শ, মুখের কথা, চাহনী
০২) চুমু খাওয়া বা জড়িয়ে ধরা
০৩) যৌন সংবেদনশীল অংগে হাত দেয়া
০৪) সর্ম্পর্ণ যৌন ক্রিয়া করা

পরিচিতরা কেন বেশী নির্যাতন করতে পারে?
০১) অভিভাবক সাবধানে থাকার প্রয়োজন মনে করেনা।
০২) নির্যাতনকারী কাছে আসার সুযোগ পায়
০৩) কর্তৃত্বমূলক সম্পর্ক তৈরির সুযোগ পায়
০৪) শিশুর পক্ষে বাহ্যিক বাধা নেই
০৫) শিশুর অভ্যন্তরীণ বাধা বা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অভাব।

কারা নির্যাতনকারী ?

০১) পরিচিত
০২) পরিবারের লোক
০৩)পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়
০৪) প্রতিবেশী
০৫) পরিচিত শুভাক্ষাংখী
০৬) বিকারগ্রস্থ
০৭) অপরিচিত

কীভাবে নির্যাতনকারী শিশুকে বশে আনে ?
০১) প্রলোভন দেখিয়ে
০২)ভয় দেখিয়ে
০৩) নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
০৪)সহিংসতা

শিশু কেন বলতে পারেনা ?

০১) সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে ধারণার অভাব
০২) প্রকাশের ভাষা জানা নেই
০৩) সামাজিক কারণ
০৪) নির্ভরতার অভাব
০৫) লজ্জা
০৬) অপরাধবোধ ও ভয়

যৌন নির্যাতনে শিশুর মনোজগতের প্রতিক্রিয়া :
০১) যৌন নির্যাতনের কারণে তার আমিত্ববোধ এবং মনোজগত বদলে যায়
০২) শিশু শারিরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যায় ভোগে
০৩) নিজেকে অসহায় ভাবে
০৪) নিজেকে নষ্ট মনে করে
০৫) লজ্জা ও অপরাধ বোধে ভোগে
০৬) সবার কাছে থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে

শিশুর আচরণে যৌন নির্যাতনের প্রভাব :
০১) আত্মনির্যাতন
০২) অসহায়ত্ব বা আক্রমনাত্বক মনোভাব
০৩) আবেগহীনতা /নির্জিব
০৪) বিশ্বাসঘাতকতাকেই অনিবার্য বলে ধরে নেয়
০৫) যৌন আচরণে পুনরাবৃত্তি ঘটায়
০৬) স্বাভাবিক যৌন জীবনে অনীহা

নিজেকে সংশোধন করা :
আত্মসজেতনতা-ক্ষমতায়ন-বাঁচার কৌশল

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :
০১) বিশ্বাস করা ( পরিবারের সব সদস্য )
০২) সাবধানতা
০৩) ব্যাক্তিগত অংগের নাম স্বাভাবিকভাবে শেখানো
০৪) অপছন্দনীয় আদর, স্পর্শের অনুভূতি ও পার্থক্য করতে সহযোগিতা
০৫) এলাকায় সবাইকে সচেতন করা
০৬)নির্ভয়ে সব কিছু অভিভাবকের সাথে শেয়ার করার পরিবেশ তৈরি করা