Pages

Saturday, December 11, 2010

উইকিলিকস : তথ্যযুদ্ধ এবং বিশ্ব রাজনীতির নতুন ঢেউ



এক.
একের পর এক তথ্য ফাঁস করে সারা দুনিয়ায় ঝড় তুলেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও ওই সব বার্তায় আছে বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতার স্বভাবচরিত্র ও ব্যক্তিগত দোষগুণ। জুলাই মাসে আফগানিস্তান সংঘাতের ওপর ৭৭ হাজার গোপন মার্কিন ফাইল এবং অক্টোবর মাসে ইরাক যুদ্ধবিষয়ক চার লাখ দলিলপত্র ফাঁস করে যুক্তরাষ্ট্রকে হতভম্ভ করেছেন। গত জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ম্যানিংয়ের সিক্রেট ইন্টারনেট প্রটোকল রাউটার নেটওয়ার্কে (সিপরনেট) ঢোকার সুযোগ ছিল। এ নেটওয়ার্ক থেকে সরকারি ও কূটনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা যায়। মার্কিন কর্তৃপক্ষ উইকিলিকসের দলিল ফাঁসের ক্ষেত্রে আগেও যেমন বলেছে এর ফলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে (আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের নথি), এবারও তেমনি বলছেন মার্কিন কূটনীতিকেরা বিপদে পড়তে পারেন। উইকিলিকসের সর্বশেষ তথ্য ফাঁস আসলেই কতটা ভয়ঙ্কর তা ইতোমধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারীর বিবৃতিতে বুঝা গেছে।

দুই.
বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড়:
২৫১,২৮৭টি বার্তার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র কয়েক'শ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, ব্রিটেনের গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের লো মঁদ, জার্মানির ডের স্পিগেল ও স্পেনের এল পেইস্ত অন্তত এ পাঁচ বিখ্যাত পত্রিকাকে উইকিলিকস সবগুলো বার্তার কপি সরবরাহ করেছে সুবিধামতো ছাপার জন্য। ব্রিটেনের দি টাইমস পত্রিকার উপসম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ধরে নেওয়া যায় গুরুতর কোনো বিশ্বাসঘাতকতা বা কেলেঙ্কারি নয়, স্রেফ বিব্রতকর কিছু সত্যি বেরিয়ে আসতে পারে এ দফার লিক থেকে। তবে কূটনীতিকেরা এখন থেকে আর সাংকেতিক তারবার্তার মাধ্যমে সরল ও খোলামেলা অভিমত পাঠাতে না পারলে কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি রক্ষা আরও কঠিন হবে। ফরেন পলিসিতে লেখা হয়েছে, মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নির্ভয়ে ওয়াশিংটনে সাদাসিধে ভাষায় এ ধরনের বার্তা পাঠাতে পারা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রথম পাতাজুড়ে তাঁদের গোপন বার্তা এমনটা অনাকাঙ্খিত। তা হলে কেউ ঝুঁকি নিয়ে আর খবর পাঠাবেন না। এটা খুব উদ্বেগজনক। দি টেলিগ্রাফ-এর বেনেডিক্ট ব্রোগান বেশ রগড় করেছেন বিষয়টা নিয়ে। তাঁর ভাষায়, এটা এক হিসেবে মজার ব্যাপার। ব্রোগানের যুক্তি, এতে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ধরুন ফাঁস হওয়া গোপন বার্তায় দেখা গেছে, ইয়েমেনে গোপনে আল-কায়েদা সদস্যদের সাবাড় করছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিন.
কে এই অ্যাসেঞ্জ:

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বয়স ৩৯ বৎসর। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। গোপন নথি প্রকাশ করতে সবাইকে সহায়তা করার জন্য ২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাসাঞ্জ। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দেখতে ছিপছিপে, দীর্ঘদেহী, শুভ্রকেশধারী । মানুষটির গলার স্বর খুবই মৃদু। এতটাই মৃদু যে মাঝেমধ্যে তাঁর কথা শোনাই মুশকিল। নিজেকে একাধারে সাংবাদিক, প্রকাশক ও উদ্ভাবক মনে করেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, আমি এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি যা গণমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ সমস্যার সমাধান করবে।

চার.
কতজন কাজ করে উইকিলিকসে?
উইকিলিকসে কাজ করেন ৬জন পূর্ণকালীন স্বেচ্ছাসেবী। ওয়েবসাইটটির রয়েছে প্রায় এক হাজার এনক্রিপশন বিশেষজ্ঞ।
উইকিলিকসের মুখপাত্র শুধু তিনি নিজে। ওয়েবসাইটটিতে যেসব নথিপত্র প্রকাশ করা হয়, তা সব সময় হুবহু প্রকাশ করা হয় না। পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন অ্যাসাঞ্জ। তরুণ বয়সে তিনি ছিলেন হ্যাকার।

পাঁচ.
তথ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে:
উইকিলিকস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়টা এতা বেশী যে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে ইন্টারনেটের জগৎ থেকে উইকিলিকসকে উধাও করে দিতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গত ২ ডিসেম্বর উইকিলিকসের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ছয় ঘণ্টার মধ্যে সুইজারল্যান্ড থেকে আবার চালু হয় উইকিলিকস। গত ৪ ডিসেম্বর উইকিলিকস ঘোষণা দিয়েছে, জার্মানি, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে তাঁদের ওয়েবসাইটের পৃথক তিনটি ডোমেইন নিবন্ধন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক টুইটারের বার্তায় উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ লিখেছে, প্রথমবারের মতো বড় ধরনের তথ্যযুদ্ধ (ইনফো ওয়ার) শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধক্ষেত্র উইকিলিকস, আর আপনারা সৈন্যসামন্ত। একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইকিলিকস তাদের ওয়েবসাইটের সার্ভার ফ্রান্সে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এ কথা জানতে পেরেই ফরাসী মিত্রদের দ্বারস্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্রান্সের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফরাসী সরকারও এখন উইকিলিকসের ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ফরাসী বাণিজ্যমন্ত্রী এরিক বেসন উইকিলিকসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশের ব্যবসায়ী এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ফ্রান্সে উইকিলিকসের সার্ভার শিগগির বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ছয়.
অ্যাসাঞ্জকে হত্যার হুমকি:
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি দাবি করেন, নথি ফাঁস করে তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি বলেন, আমার বা উইকিলিকসের কিছু হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও এক লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাবে। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সুইডিশ পুলিশ।


সাত.
যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারণা:
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে তারা এমন ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করছে যে উইকিলিকস যা করছে, তা বেআইনি। যারা উইকিলিকসে সহযোগিতা করবে, ভবিষ্যতে তারা সরকারী চাকরির অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।

আট.
হোয়াইট হাউসের নির্দেশ:
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে যথাযথ অনুমোদন ছাড়া উইকিলিকসে ফাঁস করা গোপন নথি পড়তে না পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গোপন তথ্য গোপন রাখাই প্রত্যেক কর্মকর্তার দায়িত্ব। গোপন তথ্য প্রকাশ হওয়া মানে এই নয় যে সেগুলো গোপন রাখার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।

নয়.
এগিয়ে এসেছেন হ্যাকাররা:
একসময়কার হ্যাকার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সহযোগিতা করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ইউরোপের হ্যাকাররা। তাঁরা বলেছেন, উইকিলিকসের মতো ওয়েবসাইট চালু রেখে তথ্য অধিকার বহাল রাখতে চান তাঁরা। তাই উইকিলিকসের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২১টি ডোমেইন জোগাড় করেছেন তাঁরা।

দশ.
উইকিলিকসের তথ্যমতে রাশিয়া হচ্ছে মাফিয়া রাষ্ট্র :
রাশিয়া, বেলারুশ ও চেচনিয়াকে মাফিয়া রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন একজন জ্যেষ্ঠ স্প্যানিশ কৌঁসুলী। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ওই কৌঁসুলী এ মন্তব্য করেন। উইকিলিকসের সদ্য প্রকাশিত মার্কিন গোপন কূটনৈতিক দলিলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। উইকিলিকসে প্রকাশিত ওই তথ্যে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ­্লাদিমির পুতিনও এই মাফিয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।

এগার.
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ :
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। একই সঙ্গে তার নাম ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ানটেড তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রেড নোটিশে অ্যাসাঞ্জের অবস্থান সম্পর্কে কেউ কিছু জানলে তা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। অবশ্য ইন্টারপোল জানায়, ৩৯ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এই পরোয়ানা জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সদস্যভুক্ত সব দেশকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যে কোনো দেশে অ্যাসাঞ্জকে দেখা গেলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। এর আগে অ্যাসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোপন নথি প্রকাশ করায় তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

বার.
উইকিলিকসের নতুন ওয়েবসাইট চালু :
গোপন তথ্য ফাঁসের জন্য বহুল আলোচিত উইকিলিকসের ওয়েবসাইট wikileaks.org বন্ধ করে দিয়েছে ডোমেইন নেইম প্রোভাইডার ইভরিডিএনএস.নেট। তবে ছয় ঘণ্টা পর নতুন ঠিকানায় (wikileaks.ch) সাইটটি আবারও চালু করেছে বলে জানিয়েছে উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। প্রোভাইডার কোম্পানিটি জানায়, বিপুলভাবে সাইবার হামলার শিকার হওয়ায় গত ৩ ডিসেম্বর ওই ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তারা জানায়, সাইবার হামলার কারণে তাদের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তের.
উইকিলিকসে বাংলাদেশ বিষয়ে ২১৮২ নথি
ওয়েবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ গোটা বিশ্বের যে আড়াই লাখ নথি ফাঁস করার মিশনে নেমেছে, তার মধ্যে দুই হাজার ১৮২টি বাংলাদেশ বিষয়ক। গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত উইকিলিকস তার ওয়েবসাইটে ৬৮৩টি নথি প্রকাশ করেছে। বাকিগুলো গুরুত্ব বুঝে পর্যায়ক্রমে আগামী কয়েক মাসে প্রকাশ করা হবে বলে উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ১৯৬৬ সাল থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেশটির ২৭৪টি দূতাবাসের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া নথি ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে ৩৭ নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। উইকিলিকস সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য নথির মধ্যে আট হাজার ৩২০টি চীনবিষয়ক, সাত হাজার ৯৫টি আফগানিস্তান বিষয়ক, পাঁচ হাজার ৮৭টি ভারত বিষয়ক এবং চার হাজার ৭৭৫টি পাকিস্তান বিষয়ক। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত নথির চারটিতে বাংলাদেশের নাম এসেছে। এগুলোর মধ্যে দুটি প্যারিসের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে এবং বাকি দুটি ইসলামাবাদের দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো। এ পর্যন্ত ফাঁস হওয়া এমন সাতটি নথি রয়েছে যেগুলোর অনুলিপি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে এসেছে।

চৌদ্দ.
অবশেষে গ্রেফতার উইকিলিকিস সম্পাদক
অবশেষে গ্রেফতার হলেন জুলিয়ার অ্যাসাঞ্জ। মঙ্গলবার গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ৯টায় গ্রেফতার হন বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলা ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদককে গ্রেফতার করে ব্রিটেনের পুলিশ। সুইডেনে যৌন নিপীড়নের দায়ে দায়ের করা এক মামলায় লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার আগে নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে ব্রিটিশ পুলিশের প্রশ্নের জবাব দিতে আদালতে হাজির হবার কথা জানিয়েছিলেন অ্যসেঞ্জের আইনজীবী মার্ক স্টেফেন।

পনের.
বিশ্ব রাজনীতির নতুন ঢেউ

আসাঞ্জের প্রকাশ করা এসব দলিল বিশ্ব রাজনীতির নতুন আবহ তৈরি হয়েছে। এদিকে বিখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী, ভাষাতাত্ত্বিক নোয়াম চমস্কি উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়ান গিলার্ডের কাছে পাঠানো একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। চিঠিতে গিলার্ডকে তিনি এ বিষয়ে সবল বিবৃতি দেওয়ার জন্যও বলেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন আইনজীবী, লেখক ও সাংবাদিকরা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। অপরদিকে রুশ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের মনে করে অ্যাসাঞ্জকে নোবেল দেওয়া উচিৎ। ৮ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে একথা জানিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভবন ক্রেমলিনের একটি সূত্র। সূত্র জানায়, ক্রেমলিনের মতে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত কীভাবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সাহায্য করা যায় তার উপায় নিয়ে ভাবা। সম্ভবত এ উপায়গুলোর একটি হতে পারে ‘তাকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা। অন্যদিকে আড়াই লাখ মার্কিন কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায়, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে নয় যুক্তরাষ্ট্রকেই দোষারোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া। গোপন তথ্য ফাঁসের এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য নিরাপত্তার পর্যাপ্ততা নিয়ে ৮ডিসেম্বর প্রশ্ন তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেভিন রুড। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুড বলেন, মার্কিন কূটনৈতিক যোগাযোগ সম্পর্কিত আড়াই লাখ গোপন তথ্য প্রকাশের জন্য জনাব অ্যাস্যাঞ্জ নিজে দায়ী নন। তিনি আরো বলেন,এর জন্য আমেরিকানরাই দায়ী। এছাড়াও এসব গোপন তথ্য প্রকাশের পর রাশিয়া, ফ্রান্স, ইরান, সৌদি আরব, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া নতুন করে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।