Pages

Tuesday, April 6, 2010

কাজীর গাঁ-তে কয়েক ঘন্টা, কাজী জহিরের সাথে একদিন



কাজীর গাঁ-তে কয়েক ঘন্টা, কাজী জহিরের সাথে একদিন
এবং প্রথম আলোর ইকবালের বিয়ে প্রসঙ্গ


বুধবার, ২৪ মার্চ ২০১০। শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রেডিও তেহরানের সাংবাদিক এমএম বাদশাহ’র সাথে চা খাচ্ছিলাম। তখন ঘড়িতে বাজে সন্ধ্যা পৌনে আট। হঠাৎ আমার সেল ফোনে ক্রিং ক্রিং শব্দ। প্যান্টের পকেট থেকে সেল ফোন টা বের করে স্ক্রীনে দেখি এক অপরিচিত গ্রামীণ নাম্বার। রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসল, আপনি সাইফ বলছেন? আমি ইয়েস বলতেই উনি বলল, আমি কাজী জহিরুল ইসলাম বলছি। ও আল্লাহ! আমার মনে তখন একশত ষাট ডিগ্রি হার্টবিট বেড়ে গেছে। উনি আমাকে ফোন !!!। অবশ্য লন্ডন থেকে মুক্তি আপু ফেসবুকে আমাকে জানিয়েছিল, জহির দেশে যাচ্ছে এক সপ্তাহের ছুটিতে। যাই হোক দেড় মিনিটে কথোপকথনে উনি বলল, আমি গত সোমবার এসেছি, আগামী সোমবার চলে যাবো। শুক্রবার সকালে আমার বাসায় আসবেন। ফোন করে ঠিকানা জেনে নিবেন।

বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০১০। সকালে অফিসে এসে ফোন দিলাম জহির ভাইকে। তাঁর বাসার ঠিকানা দিলেন, বললেন, আগামীকাল [২৬ মার্চ ] শুক্রবার, সাইফ আপনি যদি ফ্রী থাকেন, চলেন ঘুরে আসি গাজীপুর। যাকে কোনদিন দেখিনি, শুধু অনলাইনে কথা হতো, চ্যাট হতো, অনলাইনেই তাঁর কাছ থেকে পত্রিকার জন্য লেখা নিয়েছি, তাঁর এমন প্রস্তাবে রাজী না হয়ে পারলাম না। অবশ্য আমিও গত কোরবানী ঈদের পর কোথাও যেতে পারিনি অফিস-পড়াশুনা-লেখালেখি প্রচণ্ড যান্ত্রিক জীবন আমার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কাজি জহিরুল ইসলাম জাতিসংঘের আর্ন্তজাতিক কর্মকর্তা হলেও মূলত একজন কবি, কথাশিল্পী। বিশ্ব ভ্রমণের উপর লিখে চলেছেন নানা বর্ণিল সব গদ্যরচনা। ইতিমধ্যেই তাঁর ২৫টিরও বেশি গ্রন্থ বেরিয়েছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে লিখছেন অনবরত।


শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০১০। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম গুলশান নিকেতনের উদ্দেশ্যে। আমি সময়ের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। উনি আমাকে সময় দিয়েছিল সকাল ১০টা। মীরপুর থেকে আমি ৯.৫২ মিনিটে গুলশানে উনার বাড়ীর গেটে গিয়ে ফোন করি। ফ্যাট বাড়ী। সুন্দর সাজানো সিড়ি। লিফটে চলে গেলাম চারতলায়। কলিং বেল টিপটেই জহির ভাই হাসিমুখে দরজা খুলে বলে, ওহ! সাইফ, আসেন। ড্রইং রুমে ঢুকেই দেখি দুইজন সাংবাদিক। বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে এসেছে সাাৎকার নিতে। দীর্ঘ সাাৎকার নিতে সাংবাদিকের উপর আমারই প্রচণ্ড মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিল।

এরই মধ্যে চলে আসল অবনী অনার্য। কবি ও নির্মাতা অবনী সমপ্রতি একটি মুভি তৈরি করছেন। অবনীর সাথে কথা বলতে বলতে সাাৎকার পর্ব শেষ করে সাংবাদিকরা চলে গেল। এর পর শুরু হল আমাদের আয়োজন। দেরী না করে চকলেট খেতে খেতে জহির ভাই, অবনী এবং আমি বের হলাম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।

আমরা যাচ্ছি। ছোট একটি প্রাইভেট কারে জহির ভাই সামনে সিটে। অবনী আর আমি পেছনের সিটে বসে গল্প করছি। সাঁ সাঁ করে গাড়ি এয়ারপোর্ট আতিক্রম করল। স্বাধীনতা দিবস থাকায় রাস্তায় খুব একটা যানজট নেই। গল্প হচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতি, জহির ভাইয়ের দীর্ঘ বিদেশে থাকার নানা অভিজ্ঞতা, জাতিসংঘে কর্মররত জহির ভাইয়ের বিভিন্ন স্মৃতি এবং আমাদের ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গ। আবহাওয়া খুবই চমৎকার। গরম খুব একটা নেই। আমরা যাচ্ছি। বেলা ১২ টায় পৌঁছে গেলাম গাজীপর শ্রীপুর টেপির বাড়ী। পাশেই কাজীর গাঁ।

আমরা ঢুকে গেলাম কাজীর গাঁ-তে। সাড়ে চার বিঘা জমির চারপাশে সুসজ্জিত ইটের তৈরি বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে আম, জাম, কাঠাল, লিচু, নারিকেল, জলপাই, কলা, পেঁপে, জামরুলসহ রকমারি ফল ও ফুলের গাছ-গাছালিতে ভরা। প্রকৃতির নির্মল সব আয়োজন এখানে আছে। আছে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীদের জন্য একটা ঘর।

ঘরটার উপরে ছনের চাল। আমাদের আঞ্চলিক ভাষা চাল। চাল এর ভালো বাংলা হল ছাদ । মেঝেটা পাকা করা। চারপাশ খোলা । শুনলাম এই ঘরে নাকি মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে নাটকের শুটিং এর জন্য বিভিন্ন নাট্যদল ছুটে আসে। তো আমরা কিছুটা সময় কাজীর গাঁ-তে এসব প্রকৃতির সাথে থাকতে থাকতে ২টা বেজে গেল। ঔ ঘরটাতে খাবার এর আয়োজন হল। ভাত, পাট শাক, ইলিশ মাছ ভাজি, মুগীর মাংস, গরু মাংসের ভোনা, দুধ, ইত্যাতি বিশাল আয়োজন। আমরা তিনজনসহ ওখানকার কয়েকজন খেলাম খুবই মজা করে। কাজীর গাঁ-বাড়ীটার কেয়ারটেকার মামার স্ত্রী অসাধারণ রান্না করেছিল।

খাওয়া দাওয়া সেরে আরো কিছুটা সময় ঘুরে দেখলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা পেঁপে গাছে পেকে আছে পেঁপে। মামী পেঁপেটাকে গাছ থেকে পেরে জহির ভাইয়ার জন্য ব্যাগে দিয়ে দিল। সময় তখন বিকেল পৌনে চারটা। মন চাইছিলনা ওখান থেকে ঢাকায় আসতে। কিন্তুু যেতে যাহি নাহি চায়-তবু যেতে হয়-এই অমোঘ সত্যকে ভেবে আমরা বিদায় নিলাম এই কাজীর গাঁ থেকে।


ফিরতে ফিরতে ঢাকায় তখন সন্ধ্যা। জহির ভাই বলল, চলেন, আমি একা, ইকবালের বিয়েটা খেয়ে আসি। ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বর্তমানে প্রথম আলোতে কর্মরত। উইকলি সাপ্লিম্যানট ছুটির দিন দেখেন। প্রথম আলোরই আরেকটা উইকলি সাপ্লিম্যানট নকশার সামার সাথে বিয়ে। আমরা চলে গেলাম ধানমণ্ডির ফর সিজন রেস্টুরেন্টে। বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে রাত ১০টায় জহির ভাইকে বিদায় দিয়ে ফিরলাম বাসায়। অনেকদিন পর পরিতৃপ্তির একটা দিন কাটালাম।