Pages

Wednesday, May 20, 2009

দক্ষিণ এশিয়া মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে!


পৃথিবীজুড়ে এখন এক নতুন অস্থিরতা। যুদ্ধ, বিগ্রহ, নিগ্রহ তো চলছেই, তার ওপর হাজির হয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির মন্দাদশা।
ইতোমধ্যে ‘আফগানিস্তান’ সেই রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার যুদ্ধরাজনীতি, অস্ত্র অর্থনীতি এখন আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করেই। সুতরাং পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ প্রায় সবাই আমরা এই রণক্ষেত্রের আওতাধীন। বড় দেশ ভারত, তার অর্থনীতির জোরেই, রাজনীতির মতায় মার্কিন-ইউরোপের বড় মিত্র বনেছে। তাহলে এই অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর কি হবে? এ প্রশ্ন জাগলেই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের বর্তমান চেহারা ভেসে ওঠে। বাংলাদেশও সেই বিবেচনায় বড় ঝুঁকির মুখে।



২·
ওয়ান ইলেভেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রজীবনে এক ঐতিহাসিত ট্র্যাজেডি। দুই রাজনৈতিক দলের অসহিষ্ণুতা ও অবিশ্বাস এবং সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রতিহিংসার রাজনীতি বাংলাদেশকে ১/১১-এর মতো ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। রাজনৈতিক শুদ্ধতা আর অবিবেচনা দুই বড় রাজনৈতিক দলকে পরস্পরের মুখে দাঁড় করিয়ে ক্রমাগত বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর অংশ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির মোড়কে বেসামরিক নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার ছাত্ররাজনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুলিশ প্রশাসন ইত্যাদি অফিসে-আদালতে দলীয়করণ এমনভাবে ঘটেছে যাতে অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্য, নিরপে মানুষ সামনের দিনে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় নানান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আঘাত হানা হয়েছে রাজনৈতিক দল নামের প্রতিষ্ঠানে। দল ভাঙা, সংস্কারের নামে বিদ্রোহ- একের পর এক ঘটনাচক্রে রাজনৈতিক দলগুলোতে তৈরি হয়েছে অবিশ্বাস আর সন্দেহ। ছাত্র-শিক্ষক সেনাবাহিনী সংঘর্ষ ঘটিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে পরস্পরকে। মিডিয়া এবং সেনাবাহিনীকে প্রতিপ হিসেবে দাঁড় করানোর পুরনো চেষ্টা বারবার ফিরে এসেছে।
৩·
২৬ নভেম্বর ২০০৮ ঘটল মুম্বাই হামলা। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব দেখল গোটা পৃথিবী। উদার গণতান্ত্রিক দেশ ভারত রাজনৈতিক বিবেচনায় সামরিক সমাধানের আওতায় এ হামলার মোকাবেলা করলেও পাকিস্তান ভারতে সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যায় বহুলাংশে।
৪·
এর সমাপ্তি ঘটতে না ঘটতেই শ্রীলঙ্কা জুড়ে হঠাত করেই দ্রুত পতন ঘটতে শুরু করল শক্তিমান তামিল গেরিলাদের।
৫·
এ কৌতূহলের সুরাহা না হতেই আক্রান্ত হলো বাংলাদেশ। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ রক্তাক্ত হলো বাংলাদেশ। কথিত বিডিআর সেনাদের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে হত্যা এবং পৈশাচিকতার মাধ্যমে যে রক্তক্ষয়, পারস্পারিক অবিশ্বাস আর জিঘাংসার উদ্‌ভব হলো তার খেসারত কতকাল চলবে কে জানে?
৬·
পাকিস্তান মানবিক বিপর্যয়ের মুখেঃ
পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় কয়েক লাখ লোক ঘর ছেড়ে পালানোর পর দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকজন প্রচণ্ড গরম ও খাদ্য-পানির অভাবে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। নিজ বাগিঘর ছেড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
১০ মে নতুন করে প্রায় এক লাখ লোক সোয়াত ছেড়েছে। শরণার্থীদের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আবেদন জানিয়েছে পাকিস্তানের মন্ত্রিপরিষদ। গত মাসের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বলেছেন, সোয়াত উপত্যকায় অবস্থান করা তিন হাজার তালেবান জঙ্গির সবাইকে হত্যা করা হবে।
৭·
তালেবান দমনে নিরীহ মানুষের মৃত্যু নিয়ে আফগানিস্তানে ক্ষোভ
আফগানিস্তানে তালেবান ও অন্যান্য উগ্রবাদী শক্তির বিরুদ্ধে হামলার সময় সাধারণ নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ও ভোগান্তি বেড়ে চলার ফলে চরম সমস্যায় পড়ছে দেশটির সরকার। ফারাহ প্রদেশে হামলার প্রতিবাদে রোববার কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থীমার্কিনবিরোধীশ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর ওপরও চাপ বাড়ছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে যৌথ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের ফারাহ প্রদেশে দুটি গ্রামে মার্কিন বিমান হামলায় প্রায় ১৩০ জন নিরহি মানুষের মৃত্যু হয়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
৮·
শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণঃ বেসামরিক লোক নিহত
শ্রীলঙ্কায় গত সপ্তাহের শুরুতে সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে অন্তত ৩৭৮ জন বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে এক হাজার ১২২ জন। রণাঙ্গনের একটি হাসপাতালে কর্তব্যরত একজন সরকারি চিকিঃসক এ দাবি করেছেন।
তবে তামিল গেরিলাদের দাবি, ৯ মে রাত থেকে শুরু হওয়া সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে দুই হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনী এ গোলাবর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে।
রণাঙ্গনের একটি সরকারি হাসপাতাল পরিচালনাকারী চিকিঃসক ভি শানমুগারাজা জানান, শনিবার এক রাতের সেনা অভিযানেই এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তিনি এ ঘটনাকে তামিল গেরিলাবিরোধী সেনা অভিযানের ‘সবচেয়ে রক্তাক্ত’ দিন হিসেবে অভিহিত করেছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যে এলাকায় অবস্থান করেছে সেখান থেকেই এ গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গেরিলাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ‘তামিলনেট’ দাবি করেছে, এ অভিযানে প্রায় দুই হাজার নির্দোষ লোক নিহত হয়েছে। তবে নিরপে কোনো সূত্র থেকে এ হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। এলাকাটি সাংবাদিকদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটি শ্রীলঙ্কা সরকারঘোষিত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ এলাকা।
৯·
নেপালি পার্লামেন্টের অধিবেশন অচল মাওবাদী বিক্ষোভ
রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সরকার গঠনে সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ায় নেপালের প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদব গতকাল পার্লামেন্টকেই নতুন সরকার গঠন করতে বলেছেন। তবে মাওবাদী এমপিদের বিক্ষোভের মুখে পার্লামেন্টের অধিবেশনই বসতে পারছে না। গত রোববারও অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হন স্পিকার। মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ডের পদত্যাগের পর শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠনের জন্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট যাদব। কিন্তু তা না হওয়ায় রোববার তিনি নতুন আবেদন রাখেন পার্লামেন্টের কাছে। পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠনের তাগিদ দেন তিনি।
১০·
যুদ্ধ, সন্ত্রাস আর জঙ্গি হামলায় দণি এশিয়া এখন বিপর্যস্ত। একদিকে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সঙ্গে সরকারি বাহিনী যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোক মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে জঙ্গি ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষেও প্রাণ হারাচ্ছে নিরিহ জনতা। আফগানিস্তানে জঙ্গি হামলার পাশাপাশি চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণ এবং যথারীতি মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ । নেপালে সেনাবাহিনীর সঙ্গে নবনির্বাচিত মাওবাদী নেতার দ্বন্দ্বে সদ্য পাওয়া গণতন্ত্রের স্বাদ বিস্বাদ হতে চলেছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ বেশ কিছুদিন থেকেই শান্তিতে ঘুমোতে পারছে না। তাই অকপটেই বলা যায় দণি এশিয়া এখন মৃত্যর দিকে ধাবিত হচ্ছে।

Wednesday, May 6, 2009

সম্ভাবনার বাংলাদেশ

সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। এ সম্পদ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ। এসব সম্ভাবনার কথা নিয়ে পাঠকদের জন্য এই বিশেষ রচনাটি লিখেছেন সাইফ বরকতুল্লাহ। আজ প্রকাশিত হলো ২য় পর্ব।


১৫·পাথরকুচি থেকে বিদ্যুত
এবার পাথর কুচি থেকে বিদ্যুত।অসাধারণ এক আবিষ্কার।আবিষ্কারক হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌরশক্তি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড· কামরুল আলম খান।এক একরে পাথরকুচি চাষ করে তা দিয়ে মাত্র ১কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা যাবে বিদ্যুত প্লান্ট।৫০মেগাওয়াটের এই প্লান্ট থেকে প্রতিদিন উতপন্ন হবে ৩১ লাখ ২০হাজার টাকার বিদ্যুত।৫০থেকে ৬০ বছর স্থায়ী হবে এই প্লান্ট ।এক বছরে প্লান্ট থেকে বিদ্যুত পাওয়া যাবে ১১৪কোটি টাকার।এই বিষ্কর উদ্‌ভাবনকে কাজে লাগানো গেলে বিদ্যুতের আর কোন সঙ্কট থাকবেনা। গ্যাসের জন্য কমে যাবে উদ্বেগ।আর এ পাথরকুচি পাতা চাষ করে কৃষকের ঘরেও আসবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।এক একর জমিতে পাথরকুচি আবাদ করে বছরে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদন করা যাবে। এর ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্লান্ট তৈরি করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থানও করা সম্ভব হবে।

১৬·পর্যটন
বিশ্ব পর্যটন শিল্পের মহাসচিব ফ্রান্সিকো ফ্রাংগিউলি বাংলাদেশ সফরে এসে বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনার অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত দেশ। এখানে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য উন্নত প্রযুক্তি বা মূলধনের প্রয়োযন নেই। বরং দেশের বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সৃষ্ট সুবিধাদি দ্বারাই এ শিল্পকে উন্নত করা যায়।
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবন রয়েছে বাংলাদেশে।রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের গর্ব। রয়েছে নওগাঁর পাহাড়পুরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার। ঢাকার লালবাগ কেল্লা,বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ,সিলেটের চা বাগান ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পর্যটন ষ্পট।

১৭·সম্ভাবনার দুগ্ধশিল্প
দুগ্ধশিল্প। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল,৩৬৬ কোটি টাকা উতপাদন মুখী পশু স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করা হলে এবং উন্নত মানের গোখাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে পারলে দেশি দুধের উতপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব। অর্থাত ২১ লাখ ৫৬ হাজার টন তরল দুধ বাজারে যোগ করা যাবে।

১৮·চা
বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম চা রপ্তানিকারক দেশ। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ের মাটি চা উতপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। চা উতপাদনে সিলেটের মাটিতে যেসব গুণাবলী রয়েছে পঞ্চগড়েও সেসব গুণাবলী রয়েছে। দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাঁও এবং রংপুর অঞ্চলে ভারতের বিখ্যাত দার্জিলিং প্রজাপতির চা উতপাদন করতে পারলে অন্যন্য কৃষি পণ্যেও তুলনায় তিনগুণ লাভবান হওয়া সম্ভব।
১৯·কয়লা
বিশেষজ্ঞগণ বলেন,বাংলাদেশে যে পরিমান কয়লা মজুদ আছে তা উত্তোলন করতে পারলে ২০০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা সম্ভব।বড়পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উতপাদন ২০৫-৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা সম্ভব।